Saturday, December 31, 2011

সবকিছু আমার, আপনার তাহলে কি?


আপনার

অনেকের অনেক মুদ্রাদোষ থাকে এবং অনেক ধরনের শব্দ ব্যবহার করে থাকে। এ ধরনের এক রোগী কথায় কথায় ‘আপনার’ বলত।
সে ডাক্তারের কাছে গেল। রোগী, বললঃ দেখেন ডাক্তার সাব! কাল রাত থেকে আপনার এ পর্যন্ত সাতবার পায়খানা হয়েছে, মাঝে মাঝে আপনার রক্ত যাচ্ছে। আপনার গায়ে জ্বর আছে, মানে আপনার পেট ব্যাথা এবং মাথা ঘুরানী। তার উপর আপনার সারারাত ঘুম হয়নি। আপনার মুখে রুচি নেই, জোর করে কিছু খেলে আপনার হজম হয় না। আপনার শরীর দুর্বল।
সবশুনে ডাক্তার সাহেব বললেনঃ সবকিছু আমার, আপনার তাহলে কি?

Friday, October 21, 2011

রাস্তা-ঘাটে চলার মাসায়েল


রাস্তা-ঘাটে চলার মাসায়েল
v  বড় রাস্তা হলে ডান দিক দিয়ে চলবে।
v  স্বামীর সাথে বা মুরব্বীদের সাথে চললে পিছে পিছে চলবে।
v  দৃষ্টি নত করে চলবে।
v  হাত পা ছুঁড়ে ছুঁড়ে অহংকারের সাথে চলবে না।
v  রাস্তা অতিক্রম করার সময় যথাসম্ভব দ্রুত চলবে।
v  উপর দিকে উঠার সময় ডান পা আগে বাড়ানো এবং ‘আল্লাহু আকবার’ বলা সুন্নাত। নীচের দিকে নামার সময় বাম পা আগে বাড়ানো এবং ‘সুবহানাল্লাহ’ বলা সুন্নাত। আর সমতল স্থান দিয়ে চলার সময় ‘লাইলাহা ইল্লাল্লাহু’ বলা সুন্নাত।

চিকিৎসার মাসায়েল


চিকিৎসার মাসায়েল
v  রোগ-ব্যাধিতে চিকিৎসা করানো এবং ঔষধ সেবন করা মোস্তাহাব। কেউ কেউ বলেন চিকিৎসা করানো সুন্নাত। চিকিৎসা করাতে থাকবে, কিন্তু রোগ নিরাময়ের ব্যাপারে আল্লাহর উপর ভরসা রাখতে হবে।
v  শরীয়তের বরখেলাপ তাবীজ-তুমার, ঝাড়-ফুক ব্যবহার করা জায়েয নয়। শরীয়ত সম্মত তাবীজ ও ঝার ফুঁক করা হলে তা করা যায়, তবে উত্তম নয়।
v  শরীরে যদি অস্বাভাবিকতা থাকে(যেমন আঙ্গুল বেশী আছে) তাহলে প্লাস্টিক সার্জারি করা জায়েয। নিছক সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য নয়।
v  চিকিৎসা অবস্থায় রোগের জন্য ক্ষতির বস্তু থেকে বেঁচে থাকা আবশ্যক।

পান করার মাসায়েল


পান করার মাসায়েল

v  বসে পান করা সুন্নাত।
v  ডান হাতে পান করা সুন্নাত।
v  পাত্রের ভাঙ্গা স্থানে মুখ লাগিয়ে পান না করা আদব।
v  তিন শ্বাসে পান করা সুন্নাত।
v  পানির পাত্রের মধ্যে শ্বাস না ছাড়া এবং ফুঁক না দেয়া।
v  শুরুতে বিসমিল্লাহ এবং শেষে আলহামদুলিল্লাহ বলা সুন্নাত।

বিপদ-আপদ ও বালা-মুসীবত কেন আসে এবং তখন কী করণীয়?


বিপদ-আপদ ও বালা-মুসীবত কেন আসে এবং তখন কী করণীয়?

­মানুষের উপর বিপদাপদ ও বালা-মুসীবত কখনও তার পাপের কারণে এসে থাকে। এটা এ জন্যে এসে থাকে যেন সে ভবিষ্যতে পাপের সতর্ক হয়ে যায়। অতএব এ বিপদ-আপদ তার প্রতি এক প্রকার রহমত।
আবার কখনও বিপদ-মুসীবত তার পরীক্ষা স্বরুপ এবং তার দরজা বুলন্দ করার জন্যও এসে থাকে। এটাও তার প্রতি আল্লাহর রহমত। তবে বিপদ-আপদ আসলে এটা নিজের পাপের কারণেই এসেছে তাই মনে করতে হবে এবং সে প্রক্ষিতে বিনয়ী হতে হবে এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে হবে আর বিপদ থেকে পরিত্রাণ চাইতে হবে।

খাওয়ার মাসায়েল


খাওয়ার মাসায়েল
1.        খাওয়ার পূর্বে জুতা খুলে নেয়া আদব। আজকাল চেয়ার টেবিলে খেতে যেয়ে অনাকেই এই আদবটি রক্ষা করেন না। খেয়াল রাখা চাই।
2.        খাওয়া শুরু করার পূর্বে উভয় হাত কবজি পর্যন্ত ধৌত করে নেয়া সুন্নাত।
3.        কুলি করা সুন্নাত, যদি প্রয়োজন হয়।
4.        বিনয়ের সাথে, বিনয়ের ভঙ্গিতে বসা আদব। আসন গেড়ে বসা বেশী খাওয়ার নিয়তে বা তাকাব্বুরের জন্যে হলে মাকরুহ, অন্যথায় জায়েয।
5.        দস্তর খানা বিছানো সুন্নাত।
6.        যমীনের উপর বসবে এবং বসার বরাবর খাদ্যের বরতন রাখবে। চেয়ার টেবিলে খাওয়া নিষিদ্ধ না হলেও যেহেতু চেয়ার টেবিলে খাওয়াতে অনেকগুলো সুন্নাত ও আদব বর্জিত হয়, অতএওব তা পরিত্যাজ্য।
7.        হেলান দিয়ে না খাওয়া (এমনকি হাতে ভর করেও না)।

Tuesday, October 18, 2011

মরণের পরে হাসি


মরণের পরে হাসি
ইমাম মুসলিম (রহঃ)-এর উস্তাদ রিবয়ী ইবনে হিরাশ (রহঃ) একদিন প্রতিজ্ঞা করে বললেন, “যতক্ষন পর্যন্ত আমি বেহেশতের সুসংবাদ পাব না, ততক্ষন পর্যন্ত হাসব না”। তারপর থেকে তিনি জীবনে কখনও হাসেন নি।
যখন তিনি মৃত্যূবরণ করেন, মৃত্যূর পর হাসতে লাগলেন। উপস্থিত লোকজন তার হাসি দেখে হতভম্ব হয়ে গেলেন। তাঁরা বলাবলি শুরু করলেন, জীবনে যিনি কখনও হাসেননি, মৃত্যূর পর তিনি হাসছেন! তার কারণ কি?

প্রতিশ্রুতি পূরণ


প্রতিশ্রুতি পূরণ

মোঘল সম্রাট হুমায়ূনের শাহী মহল। ভেতরে জরুরী বৈঠক বসেছে। চারদিকে সতর্কতার সাথে পাহারা দিচ্ছে প্রহরীরা।
দিল্লীর আকাশ থেকে দূর্যোগের ঘনঘটা এখনও কাটেনি। কিছুদিন আগেই ঘটে গেছে বিখ্যাত চৌসার যুদ্ধ। সেখান থেকে স্বয়ং রাজাকেই কোনমতে প্রাণ নিয়ে পালিয়ে আসতে হয়েছে। শাহী মহলের প্রধান ফটকে দাঁড়িয়ে চারদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখছিলো এক প্রহরী। হঠাত তার দৃষ্টিতে পড়লো এক ভিস্তিওয়ালা। ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছে প্রধান ফটকের দিকে। পরনে ছেড়া-ময়লা জামা। কাঁধে বহন করছে ছাগলচামরার ভিস্তি।
সন্দেহের দোলায় দুলে উঠলো প্রহরীর মন। কোন গুপ্তচর নয় তো। পাগলও হতে পারে। হাঁক ছেড়ে ভিস্তিওয়ালার গতি থামিয়ে দিলো প্রহরী। চরা গলায় জানতে চাইল, কাকে চাই? যাচ্ছ কোথায় তুমি? শান্ত ও ধীর কন্ঠে উত্তর দিলো ভিস্তিওয়ালা, ‘আমাকে বাদশাহর কাছে নিয়ে চলো’।
অট্রহাসি দিয়ে প্রহরী বললো, ‘ফকির সাহেব! বাদশাহর সাথে দেখা করতে চাও? শখ তো দেখি কম না! ভাগো এখান থেকে’।
কিন্তু ভিস্তিওয়ালা নাছোড় বান্দা। সে জোর দিয়ে বললো, আমাকে বাদশাহর কাছে নিয়ে যাও।
এবার প্রহরী ক্রুদ্ধ হয়ে ভিস্তিওয়ালাকে আটকে রেখে বাদশাহর কাছে খবর পাঠালো- জাহাপনা এক ভিস্তিওয়ালা আপননার সাথে দেখা করতে চায়।
কর্মব্যস্ত বাদশাহ হুমায়ুন আদেশ দিলেন- তাঁকে এক্ষুণি পাঠিয়ে দাও।
রাজশিংহাসনে বসে আছেন বাদশাহ হুমায়ুন, রাজদরবারে প্রবেশদ্বার দিয়ে ধীরে ধীরে প্রবেশ করলো ভিস্তিওয়ালা। আশা নিরাশার দ্বন্দে দোদুল্যমান তার মন। কাঁধে এখনও চেপে রেখেছে সেই ছাগলচামড়ার ভিস্তিটি।
হুমায়ুনের দৃষ্টি ছুটে গেল ভিস্তিওয়ালার দিকে। সাথে সাথে তার মস্তিষ্ক তোলপাড় করে উঠলো। পুরনো কিছু স্মৃতি হানা দিলো তাঁর মগজের শিরা-উপশিরায়। ‘আরে! এতো সেই মহান লোক- যিনি আমার প্রাণ রক্ষা করেছিলেন’। হুমায়ুনের চোখে ভেসে উঠলো সেই খরস্রোতা নদীর ঘটনা।
একবার যুদ্ধক্ষেত্র থেকে শত্রুর তাড়া খেয়ে এ নদীতেই ঝাঁপ দিয়েছিলেন তিনি। ফলে প্রাণ বাচানো দায় হয়ে পড়েছিলো। সেই সময় এই ভিস্তিওয়ালা তাঁর ছাগলচামড়ার এই ভিস্তি দিয়ে সাঁতার কাটতে সাহায্য করেছিলো। এই ভিস্তির উপর ভর করেই তিনি কূলে উঠে এসেছিলেন। সে সময় তাঁর প্রাণ রক্ষাকারীকে বলেছিলেন-“আমি যদি দিল্লীর সিঙ্গহাসন পাই, তুমি দেখা করবে। তুমি যা চাইবে, আমি তা-ই উপহার দেব”। এখন সেই ভিস্তিওয়ালা তাঁর সামনে দাঁড়িয়ে। আর ভাবতে পারলেন না হুমায়ুন। স্বররণখচিত সিংহাসন ছেড়ে ছুটে গিয়ে বুকে জড়িয়ে ধরলেন ময়লা জামা পরিহিত ভিস্তিওয়ালাকে। জড়িয়ে ধরেই ব্যাকুল কন্ঠে বললেন, ‘মহামান্য, আমি আপনার দ্বারা উপকৃত। বলুন, আপনি কি চান? আপনি যা চাইবেন, আমি ইনশাআল্লাহ্‌ বিনা-দ্বিধায় তাই দেব’।
ভিস্তিওয়ালা বললো, ‘আমি চাই আপনাকে সরিয়ে সিঙ্ঘাসনে বসতে’সমস্ত সবাসদ অবাক! লোকটির চাহিদার কথা শুনে সবার চোখ কপালে উঠে গেলো। লোকটি পাগল নাকি। একেবারে রাজসিঙ্ঘাসন চেয়ে বসলো! দেখা যাক বাদশাহ কি করেন।
এবার বিস্ময়ের ঘোরে সবাই লক্ষ্য করলো, প্রতাপশালী মোঘল সম্রাট হুমায়ুন মাথার মুকুট খুলে সম্মানের সাথে পরিয়ে দিচ্ছেন ভিস্তিওয়ালার মাথায়। নতুন রাজাকে সিংহাসনে বসিয়ে দিয়ে ঘোষনা করলেন, আজ থেকে ইনিই তোমাদের রাজা। আমি তাঁর নগন্য খাদেম।
গোটা দিল্লীতে তোলপাড়। প্রজাদের প্রশ্নবানে জর্জরিত হচ্ছেন হুমায়ুন। কেন তিনি সিংহাসন ছেরে দিলেন?
হুমায়ুন উত্তর দিলেন, ‘হাদীস শরীফে আছে, মুনাফিকের লক্ষণ তিনটি। তারমধ্যে একটি হচ্ছে- প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করা। আমি তো নদীতে ডুবে মারা যেতাম-যদি এই ভিস্তিওয়ালা সাহায্য না করতেন। তার উপকারের বদলায় তিনি যা চাইবেন তা-ই দেব বলে কথা দিয়েছিলাম। সেজন্য সিংহাসন চাওয়াই আমি তাঁকে তা-ই দিলাম’।
অবশেষে একদিন ও একরাত্রি যাপনের পর ভিস্তিওয়ালা হুমায়ুনের মাথায় পুনরায় মুকুট পরিয়ে দিলো। হুমায়ুনকে সিংহাসনে বসিয়ে হাত তুলে দু’আ ও করমর্দন করে বললো, ‘আমি বড় পুরষ্কার পেয়েছি। তা হচ্ছে-আপনার মহানুভবতা ও চরিত্রের দৃঢতা’।
আসুন  আমরা আমদের প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে চেষ্টা করি।

Sunday, October 16, 2011

মীলাদুন্নবী-র গোড়ার কথা


মীলাদুন্নবীর গোড়ার কথা

খৃষ্টানরা যে ভাবে ভাল একটি উদ্দেশ্য নিয়ে হযরত ঈসা (আঃ) এর জন্ম দিবস পালন করা শুরু করেছিল ঠিক সেই ভাবেই শুরু হয়েছিল মীলাদুন্নবী উদযাপন। জনৈক বাদশাহর মনে খেয়াল হল যে, খৃষ্টানরা যখন ক্রীস্টমাস ডে পালন করে তখন আমরাও যদি আমাদের নবীর জন্ম দিবস পালন করি তাহলে ক্ষতি কি? ব্যস! যেই ভাবা সেই কাজ। কিন্তু আজ দেখুন সেটা কোন পর্যায়ে পৌছে গেছে।

Sunday, September 18, 2011

পর্দার প্রয়োজনীয়তা

পর্দার প্রয়োজনীয়তা


পর্দার শাব্দিক অর্থ ঢাকিয়া রাখা। শরীয়তের পরিভাষায় পর্দার অর্থ হইল- পুরুষের দৃষ্টি হইতে নারীর সর্বাংগ ঢাকিয়া রাখা এবং নারীর দৃষ্টি হইতে পুরুষের দেহ বাচাইয়া রাখার নামই পর্দা। পর্দা করা প্রত্যেক মুসলমান ব্যক্তির জন্য অপরিহার্য কর্তব্য বা ফরজ। যাহাদেরকে চিরদিনের জন্য বিবাহ করা হারাম কেবলমাত্র তাহাদের সাথে দেখা দেওয়া জায়েয। ইহাদেরকে মোহরেম বলা হয়। গাইরে মোহরেম বা যাহাদের সাথে বিবাহ জায়েয তাহারা আত্নীয় কিংবা অনাত্নীয়, নিকটতম বা যত দূরেরই হউক না কেন তাহাদের সাথে দেখা সাক্ষাত ও নির্জন আলাপ করা হারাম।

Monday, August 8, 2011

মৃত্যু ও তার যাতনা

 http://islamus.wordpress.com/2011/08/08/মৃত্যু-ও-তার-যাতনা/


মৃত্যু ও তার যাতনা
মৃত্যুকষ্ট উপদেশস্বরুপ
হযরত হাসান (রাঃ) বলেন, হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মৃত্যুকষ্ট তলোয়ারের তিনশ আঘাত সমতূল্য। তিনি আরো বলেনঃ মৃত্যুকষ্ট আমার উম্মতের জন্য উপদেশস্বরুপ।
পাঁচটি বিষয়কে পাচটির পূর্বে গনীমত মনে করো
হযরত মায়মুন বিন মাহরান (রহঃ) থেকে বর্ণিত, হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ পাঁচটি বিষয়কে তোমরা অন্য পাচটির পূর্বে গনীমত মনে করো। যথাঃ
  ১। বার্ধক্যের পূর্বে যৌবনকালকে,
  ২। অসুস্থতার পূর্বে সুস্থতাকে,
  ৩। ব্যস্ততার পূর্বে অবসর সময়কে,
  ৪। দরিদ্রতার পূর্বে সম্পদশালিতাকে, এবং
  ৫। মৃত্যুর পূর্বে জীবনকে
যৌবনকাল তথা শক্তি-সামর্থ থাকা অবস্থায় যতটুকু ইবাদত ও মেহনত করা যায়, বার্ধ্যক্যে উপনীত হওয়ার পর তা কল্পনা করাও অসম্ভব। দ্বিতীয়ত যৌবনকালে যখন গুনাহের কাজ ও অলসতায় অভ্যস্ত হয়ে পড়ে, তখন বার্ধ্যক্যে উপনীত হওয়ার পর তা দূর করা খুবই কঠিন। সুস্থতার সময়টা বড়ই মূল্যবান। অসুস্থ হলে পরে তা উপলব্ধি করা যায়। তাই সুস্থতার সময়কে নষ্ট করা অত্যন্ত ক্ষতিকর।

Thursday, August 4, 2011

খোদাভীতির আলামত

আল্লাহর প্রতি ভয়ঃ শুদ্ধ ঈমানের লক্ষণ

ফেরেশতাদের মাঝে আল্লাহর ভয়


হযরত আদী বিন আরতাত (রাঃ) বর্ণনা করেছেন। হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ সাত আকাশের ফেরেশতাগন যখন সৃষ্টি হয়েছেন, ঠিক তখন থেকেই তাঁরা সেজদায় নত হয়ে আছেন। এরপরেও তাঁরা আল্লাহর ভয়ে কাঁপছেন! তদুপরি তাঁরা যখন কেয়ামতের ময়দানে সেজদা থেকে তাদের মাথা উঠাবেন, তখন বলবেন, হে আল্লাহ! আমরা তোমার ইবাদতের হক আদায় করতে পারি নি।

জাহান্নামের ভয়

হযরত আবু মায়সারা রাদিয়াল্লাহু আনহু রাতের বেলা যখন শুবার যেতেন, তখন বলতেন, আফসোস! যদি আমার মা আমাকে জন্ম না দিতেন। এসব কথা শুনে তার স্ত্রী বলতেনঃ আপনি এসব কী বলছেন! আল্লাহ তো আপনাকে ঈমান ও ইসলামের মতো মহানেয়ামত দান করেছেন। তখন জবাবে তিনি বলতেনঃ তা তুমি সত্য বলেছ। এতে কোন সন্দেহ নেই। এই নেয়ামত অনেক বড় নেয়ামত। কিন্তু আমাদেরকে উদ্দেশ্য করে তো বলা হয়েছে, সকলকেই জাহান্নামের উপর দিয়ে অতিক্রম করতে হবে। কিন্তু একথা বলা হয়নি যে, জাহান্নামের উপরের পথ অতিক্রম করতে পারব কি পারব না!

খোদাভীতির আলামত

ইমাম ফকীহ আবুল লায়স সমরকন্দী (রহঃ) বলেছেনঃ আল্লাহর প্রতি ভয় থাকলে তা সাতটি জিনিসের মাধ্যমে প্রকাশ পায়। যথাঃ

১। জিহ্বা। আল্লাহর প্রতি ভয় থাকলে জিহ্বা দ্বারা মিথ্যা বের হয় না, গীবত বা পরনিন্দা করা হয় না, চোগলখুরি করা হয় না, অনর্থক কথা-বার্তা বলা হয় না। বরং জিহ্বা থেকে তখন জিকির ও কুরআন তেলাওয়াত বের হয়।\

২। পেট। আল্লাহর ভয় থাকলে শুধুই হালাল খাবার খাওয়া হয়। হারাম খাবার থেকে বেঁচে থাকা হয়। হালাল খাবারও খাওয়া হয় প্রয়োজন পরিমাণই। এর বেশি নই।

৩। চোখ। আল্লাহর ভয় থাকলে চোখ হারাম কিছু দেখে না। হালাল যাও দেখে তা দেখে শিক্ষা গ্রহণের উদ্দেশ্যে। আগ্রহ ও আকর্ষণের কারনে নয়।

৪। হাত। আল্লাহর ভয় থাকলে হাত দ্বারা আল্লাহপাকের অপছন্দনীয় কোন কাজ কিছুতেই করা হয় না। যা কিছু তখন হাত দ্বারা করা হয়, তা কেবল আল্লাহপাকের সন্তুষ্টি অর্জনের জন্যেই করা হয়।

৫। পা। আল্লাহর ভয় থাকলে তখন পা এমন কোন কাজের দিকে অগ্রসর হয় না, যা আল্লাহ তা'আলা অপছন্দ করেন। পক্ষান্তরে যে কাজে আল্লাহপাকের সন্তুষ্টি লাভ হবে সে কাজের দিকে পা দৌড়ে যায়।

৬। অন্তর। আল্লাহকে যে অন্তর ভয় করে, সেই অন্তরে হিংসা-বিদ্বেষ, ঘৃণা-শত্রুতা ইত্যাদি থাকতে পারে না। থাকে সেসবের স্থলে ভালবাসা-বন্ধুত্ব, সহানুভূতি-সহমর্মিতা এবং সম্মানবোধ।

৭। ইখলাস। আল্লাহকে যে ভয় করে, সে সবসময় ইখলাসকে খুঁজে বেড়ায়।আর ভয় করে, না জানি ইখলাস না থাকার কারণে আমার কোন আমল্টা নষ্ট হয়ে যায়। এমন মানুষদের উদ্দেশ্য করে আল-কুরয়ানে ইরশাদ হয়েছেঃ আখিরাতের মঙ্গল আপনার পালনকর্তা খোদাভীরুদের জন্যেই রেখেছেন।

ছয়টি বিশেষ গুণ

ছয়টি বিশেষ গুণ

হযরত আলী (রাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি নিজের মাঝে ছয়টি গুণ তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে, সে জাহান্নাম থেকে বাঁচতে এবং জান্নাতে প্রবেশ করতে পূর্ণ চেষ্টা করেছে। যথাঃ

১। আল্লাহকে চিনে তাঁর ইবাদত বন্দেগীতে লেগে যাওয়া।

২। শয়তানকে চিনে তার বিরোধিতায় উঠে পড়ে লাগা যাওয়া।

৩। সত্যকে বোঝার পর তার অনুসরণে লেগে যাওয়া।

৪। বাতীলের হাকীকত বোঝার পর তা হতে সম্পূর্ণরুপে বেঁচে থাকা।

৫। দুনিয়াকে চেনার পর তা পরিত্যাগ করা। এবং

৬। আখিরাতের চিন্তায় ও তালাশে মগ্ন থাকা।

চার কাজে অন্তর কঠিন হয়ে পড়ে

চারটি কাজ অন্তরকে কঠিন করে তুলে। যথাঃ

এক-পেট ভরে খাওয়া। (উল্লেখ্য, হালাল খাদ্য পেট ভরে খেলেও অন্তর কঠিন হয়ে যায়। সুতরাং হারাম খাদ্যের বিষয়ে আর প্রশ্নই ওঠে না।)

দুই- মন্দ লোকের সাহচর্য।

তিন- অতীতে কৃত গোনাহসমূহের কথা ভুলে যাওয়া। এবং

চার- দুনিয়ার আশা আকাক্ষা বেড়ে যাওয়া।

প্রতিটি মুসলমানের জন্যে উচিত হলো, দুনিয়ার চিন্তা কম করা। লোভ আশা আকাক্ষা কম করা। এবং আখিরাতের চিন্তা বেশি করে করা। আখিরাতের কল্যাণের জন্যে বেশি বেশি বন্দেগি করা। কারণ একথা কেউ জানে না যে, তার মরন কবে আসবে। কখন তাকে চলে যেতে হবে মাতা-পিতা, স্ত্রী-পুত্র এবং আত্নীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবের পাশাপাশি অর্থ সম্পদ সহ আরো কত কিছুর মায়াজাল ছিন্ন করে।

চারটি কাজ ছাড়া চারটি বিষয় দাবী করা অর্থহীন

চারটি ছাড়া চারটি বিষয়ের দাবি করা অর্থহীন

হযরত হাতেম যাহেদ (রহঃ) বলেন, যে ব্যক্তি চারটি কাজ না করে অপর চারতি বিষয়ের দাবি করে সে মিথ্যুক। যথাঃ

১। আল্লাহপাকের ভালবাসার দাবি করবে। কিন্তু তা পক্ষ থেকে হারাম কৃত কাজগুলো বর্জন করবে না।

২। জান্নাতকে ভালবাসার দাবি করবে, অথচ জান্নাত পাবার জন্যে চেষ্টা ফিকির করবে না। করবে না আল্লাহপাকের আনুগত্যও। তাহলে তার এই ভালবাসার দাবি মিথ্যা।

৩। নবীপ্রেমের দাবি করবে। কিন্তু তার চালচলন সম্পূর্ণই নববী আদর্শের পরিপন্থী হবে। এমন অবস্থায় তার নবীপ্রেমের দাবি শুধুই মিথ্যা বলে গন্য হবে।

৪। জান্নাতের সর্বোচ্চ মর্যাদা লাভের আশা করবে। কিন্তু সে গরীব দুঃখী অসহায় মানুষকে ভালবাসবে না, দূরে থাকবে তাদের সাহচর্য থেকে। তাহলে তার এই আশা করাটাও বিফলেই যাবে।

চারটি হাদীস

চারটি হাদীস

১। দুটি ক্ষুধার্ত নেকড়ে বাঘকে ছাগলের পালে ছেরে দেয়া হলে ছাগপালের জন্যে এই নেকরে বাঘ দুটি ততটুকু বিপজ্জনক বলে গণ্য হবে না, যতটুকু বিপজ্জনক হবে দ্বীনের জন্যে সম্পদ ও পদের লোভ। সূত্রঃ তিরমিযী শরীফ।

২। মানুষ একদিকে বুড়ো হতে থাকে, আর যুবক হতে থাকে তার মাঝে দুটি জিনিস। এর একটি হলো সম্পদ। দ্বিতীয়টি হল, দীর্ঘ জীবনের লোভ। সুত্রঃ বুখারী শরীফ।

৩। বুড়ো মানুষের হৃদয়মাঝে দুটি জিনিস সবসময় যুবক থাকে। এর একটি হলো, দুনিয়ার প্রতি ভালবাসা। আর দ্বিতীয়টি হলো, দীর্ঘ আকাক্ষা। সুত্রঃ বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ।

৪। যার বয়স আল্লাহপাক ষাট বছর পূর্ণ করে দিয়াছেন, তার কোন ওযর-আপত্তি তিনি কবুল করবেন না।

বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ যৌবনকালে মানুষ মনে করে, বার্ধক্য এখনো অনেক দূরে। বার্ধক্য দেখা দিলে তাওবা করে নিব। যে ব্যক্তি ষাট বছর বয়সে পৌছে গেল, তার জন্যে ওযর আপত্তি পেশ করার আর কোন অবকাশ রইল না। সুতরাং সে আর তাওবা করাকে বিলম্ব করতে পারে না। এখন তার জন্যে উচিত হলো, এখনই তাওবা করা।

Wednesday, July 27, 2011

ছালাম দেওয়া প্রসঙ্গে

নিম্নলিখিত লোকদেরকে ছালাম দেওয়া মাকরুহ

(১) নামায পড়া অবস্থায়, (২) কোরআন শরীফ তেলাওয়াত করা অবস্থায়, (৩) ইলেম শিক্ষাদানকারী ও গ্রহণকারীকে যখন তাহারা শিক্ষাদান ও শিক্ষা গ্রহনের কাজে থাকে, (৪) খুৎবা ও হাদীস পাঠ কালে, (৫) হাদীস, খুৎবা, কোরআন ওয়াজ শ্রবণকারীকে, (৬) আজান একামত দেওয়ার সময়, (৭) গায়রে মাহরেম যুবতীকে, (৮) বেদ্বীনকে, (৯) ফাছেককে, (১০) খেলাধুলা ও শরীয়ত বিরোধী কার্যে রত ব্যক্তিকে, (১১) স্ত্রীর সাথে কথোপকথন কালে অপর লোকের, (১২) উলঙ্গ ব্যক্তিকে, (১৩) পায়খানা পেশাবের অবস্থায় থাকা কালে, (১৪) অতি ক্ষুধার্ত ব্যক্তিকে খানা খাওয়া অবস্থায়, (১৫) বেদায়াতী ও কবিরা গুনাহকারীকে তওবা করিবার পূর্বে ছালাম দেওয়া জায়েয নাই।

Tuesday, July 26, 2011

আমাদের আমলের হিসাব করি

নিজেদের আমলের হিসাব করা দরকার

পাঁচ প্রকারের আমলের সমষ্টিই হলো প্রকৃত ইসলামী জীবন ব্যবস্থা-

১। আকায়েদ/আকীদা বিশ্বাস দুরস্ত হতে হবে।

২। ইবাদত-নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত ইত্যাদি দুরস্ত হতে হবে।

৩। মোয়ামেলাত- বেচাকেনা হালাল তরিকায় হতে হবে। রুজি রোজগার হালাল তরিকায় হতে হবে, কোন প্রকারের আমদানী যেন হারাম না হয়।

৪। মোয়াশারাত- তথা পরস্পর আচার ব্যবহার চলাফেরা, উঠা-বসা, থাকা খাওয়া সবকিছু আল্লাহর হুকুম ও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুকরণে হতে হবে।

৫। আখলাক অর্থাৎ মানুষের আখলাক দুরস্ত হতে হবে। মন্দস্বভাব-যেমন হিংসা, অহংকার, পরশ্রীকাতরতা, শত্রুতা ইত্যাদি মন্দস্বভাব নিজের মাঝে থাকতে পারবে না। ভাল স্বভাব নিজের মধ্যে তৈরী করতে হবে। যেমন বিনয়, তাওয়াক্কুল, শোকর ও ছবর ইত্যাদি ভাল স্বভাব নিজের মাঝে আনতে হবে।

উপরোক্ত পাঁচটি দিকের উপর যখন মানুষ যথাযথ আমল করে তখন তার দ্বীন পূর্ণ হয়। তখন সে ব্যক্তি প্রকৃতপক্ষে পূর্ণ মুসলমান হয়। প্রত্যেকেই দ্বীনের এ পাঁচটি দিক সামনে রেখে স্বীয় জীবনের হিসাব নেই। যেমন আমার আকীদা ঠিক আছে কিনা? আমার জিম্মায় পাঁচ ওয়াক্ত নামায জামাতের সাথে পড়া জরুরি, আমি এর কতটুকু আদায় করছি আর কতটুকু ছেড়ে দিয়েছি। আমার আমদানী হালালভাবে হচ্ছে না হারাম উপায়ে হচ্ছে? বাজারে যখন আমি কাজ কারবার করি তখন আমার কারবার দুরস্ত হয় কিনা? আমার আখলাক ঠিক আছে কিনা? অন্যের সাথে আমার ব্যবহার ঠিক আছে কিনা? আমি মিথ্যা বলি কিনা? আমি কারও গীবত করি কিনা? আমি অন্যের অন্তরে কষ্ট দেয় কিনা? আমি অন্যকে পেরেশান করি কিনা? এসব কাজের আমি হিসাব করবো। যদি কোথাও খারাবী থাকে তাহলে তা দূর করার চেষ্টা করব। যদি একেবারে না ছাড়তে না পারি তাহলে অন্ততপক্ষে কমাতে চেষ্টা করব। যেমন আমি দৈনিক কতবার মিথ্যা বলি। এখন আমি চিন্তা করবো আজ থেকেই আমি কতবার মিথ্যা বলা ছাড়তে পারি, তৎক্ষণাৎ তা ছেড়ে দিব। মজলিসে বসে আমি কতবার অন্যের গীবত করি এটা কতটুকু পর্যন্ত, এখনি যদি ছাড়তে পারি তা ছেড়ে দিব। এমনিভাবে হিসাব নিয়ে আজ থেকে গুনাহ ছাড়তে শুরু করুন এবং নিজের ইসলাহের ফিকির অন্তরে সৃষ্টি করুন। যদি একবার সংশোধনের চিন্তার আলো তোমার অন্তরে জ্বলে ওঠে তাহলে ইনশাআল্লাহ আল্লাহ তা'আলা এ আলো তোমার জীবনকে আলোকিত করে ছাড়বে। আল্লাহ আমাদেরকে সকলকে নিজ আমলের হিসাব নিয়ে নিজেকে সংশোধন করার সুযোগ করে দিন। আমীন! আমীন!!

Monday, July 25, 2011

আমাদের আকীদা কেমন হওয়া উচিত

একজন মুসলমানের আকীদা কেমন হওয়া উচিত

কোন বিষয়ে অন্তরে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস স্থাপন করাকে ঈমান বা আকীদা বলা হয়। একজন মুসলমানের ঈমানের সাথে সম্পৃক্ত সমূদয় বিষয়ের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপনের ধরনের ওপরই তার মুসলমানিত্বের আবস্থা নির্ভর করে। প্রকৃত মুমিন হতে হলে, আকীদা বিশুদ্ধ হওয়া অপরিহার্য। বিশুদ্ধ আকীদা ব্যতিরেকে প্রকৃত মুমিন হওয়া তথা ঈমানের পূর্ণতা লাভ করা সম্ভব নয়।

সাধারন মুসলমান যাতে ঈমানের বিষয়গুলো জেনে নিজ আকীদা বিশুদ্ধ ও দুরস্ত করতে পারেন, তাই আকীদা সম্পর্কিত মূল বিষয়গুলো অতি সংক্ষিপ্তাকারে নিম্নে পেশ করছি-

১। আল্লাহ তা'আলা ব্যতীত অন্য সমুদয় দৃশ্যমান ও অদৃশ্য বস্তু সমূহ আল্লাহ পাকেরই সৃষ্টি। প্রথমে এসব বস্তুর কোনটিরই অস্তিত্ব ছিল না। আল্লাহ তা'আলা এগুলো সৃষ্টি করার মাধ্যমে এগুলোর অস্তিত্ব এসেছে।

২। আল্লাহ তা'আল এক ও অদ্বিতীয়। তিনি কারো মুখাপেক্ষী নন। তিনি কারো জনক নন এবং তাঁরও কোন জনক নেই। আল্লাহ পাকের তুল্য কিছু নেই। তিনি সর্বদাই সর্বত্র বিরাজমান। তিনি পূর্বেও বর্তমান ছিলেন এবং ভবিষ্যতেও বর্তমান থাকবেন। অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যত সবই তাঁর নিকট সমান; তিনি সর্ববিষয়েই সম্যক অবগত। তিনি সবকিছু দেখেন, সবকিছু শোনেন এবং সবকিছু জানেন। তাঁর জ্ঞানের বাইরে কিছুই নেই। তিনি সব রকমের দোষ-ত্রুটি থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত এবং অতিপবিত্র। তিনিই একমাত্র মাবূদ; বান্দার বন্দেগী পাওয়ার তিনিই একমাত্র অধিকারী। তিনি সর্বশ্রেষ্ট। তিনিই সৃষ্টিকুলের রিযিক ও আহার দান করেন। তিনিই বান্দার গুনাহ মাফ করেন। তিনিই জীবনদাতা ও মৃত্যুদাতা। তাঁর নিদ্রাও নেই, তন্দ্রাও নেই। এ বিশ্বজাহানের একমাত্র তিনিই সৃষ্টিকর্তা, রক্ষাকর্তা, ত্রাণকর্তা, পালনকর্তা, বিধানদাতা ও একচ্ছত্র প্রকৃত মালিক। শেষ বিচারের দিনেরও তিনিই অধিপতি।

৩। আল্লাহ তা'আলার গুনবাচক অনেক নাম রয়েছে। তাঁর যাবতীয় গুণ পরিপূর্ণ ও চিরশ্বাশত।

৪। দুনিয়ায় ভাল ও মন্দ যা কিছু ঘটে, সবই আল্লাহ তা'আলার হুকুমেই ঘটে। আর তিনি এসব পূর্ব থেকেই অবগত।

৫। আল্লাহ তা'আলা মানুষ ও জ্বিন জাতিকে ভাল-মন্দ বোঝার উপযুক্ত বিবেক দান করেছেন এবং ইচ্ছামতো কর্ম করার শক্তি দান করেছেন। বান্দার ভাল কাজে আল্লাহ পাক সন্তুষ্ট হন এবং বান্দার গুনাহের কাজে তিনি নারাজ ও অসন্তুষ্ট হন।

৬। আল্লাহ পাক মানুষকে তাদের শক্তির বাইরে কোন কাজ করার আদেশ প্রদান করেননি। সুতরাং আল্লাহ তা'আলা ইসলামী শরীয়াতের মাধ্যমে যত আদেশ ও নিষেধমূলক হুকুম করাছেন, সেই সবই নিঃসন্দেহে মানুষের সাধ্যগত।

৭। আল্লাহ পাকের ওপর কোন কিছুই জরুরি অর্থাৎ ওয়াজিব নয়। তিনি বান্দার জন্য কল্যানমূলক যা-ই করেন, তা শুধু তাঁর দয়া বা অনুগ্রহ মাত্র।

৮। আল্লাহ তা'আলা মানুষ ও জ্বিন জাতিকে দ্বীনের সুপথ ও সৎপথ প্রদর্শনের জন্য একের পর এক অগণিত নবী রাসুল দুনিয়ায় প্রেরন করেছেন। তাঁরা সবাই নিষ্পাপ ছিলেন। তাদের প্রকৃত সংখ্যা আল্লাহ তা'আলাই জানেন।

প্রেরিত নবী-রাসুল গনের মধ্যে সর্বপ্রথম হলেন হযরত আদম (আঃ) এবং সর্বশেষ হলেন হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তিনিই শেষ নবী। তাঁর পরে আর কোন নবী দুনিয়ায় আগমন করবেন না।

৯। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বপ্নে নয়, বরং বাস্তবে সশরীরে আল্লাহ পাকের অনুগ্রহে প্রথমে মক্কা শরীফ থেকে বাইতুল মুকাদ্দাস এবং সেখেন থেকে সাত আসমান ও আরশ মু'আল্লায় পরিভ্রমণ করেছেন। একে ইসলামী পরিভাষায় ইসরা ও মিরাজ বলা হয়।

১০। আল্লাহ তা'আলা নূর দ্বারা ফেরেশতাকুল সৃষ্টি করেছেন। তাঁরা আমাদের অদৃশ্য। তাঁরা আল্লাহ পাকের আজ্ঞাবহ। তাদের সংখ্যা অগনিত। ফেরেশতাগনের মধ্যে চারজন প্রধান, তাঁরা হলেন-(ক) হযরত জিবরাইল (আঃ), (খ) হযরত মিকাঈল (আঃ) (গ) হযরত ইসরাফীল (আঃ) এবং (ঘ) হযরত আজরাইল (আঃ)।

১১। আমাদের দৃষ্টির বাইরে আল্লাহ পাকের সৃষ্ট আরেক জাতি হচ্ছে জ্বিন জাতি। তাদের মধ্যেও মানুষের মতই ভাল বা মন্দ অর্থাৎ নেককার ও বদকার উভয়রকম বিদ্যমান। বদকারদের মধ্যে ইবলীস শয়তান অন্যতম।

১২। আল্লাহ পাকের প্রিয় বান্দাগনকে ওলী বলা হয়। তাদের কারামত(আলৌকিক কার্যাবলী) সত্য। তবে ওলী হওয়ার জন্য কারামত প্রকাশ পাওয়া জরুরি নয়। বরং দ্বীনের ওপর পরিপূর্ণ পাবন্দীই ওলী হওয়ার প্রমাণ।

ওলী কখনো নবীর সমান হতে পারেন না। তেমনিভাবে যিনি নবীজির সাহাবী নন, তিনি যিত বড় ওলীই হোন না কেন, তিনি কখনো কোন সাধারণ সাহাবীরও সমতুল্য হতে পারেন না।

১৩। শরীয়তের খেলাফকারী ব্যক্তি কখনোই ওলী হতে পারে না।

১৪। যুগে যুগে আল্লাহ তা'আলা ছোট বড় অনেকগুলো আসমানী কিতাব নাযিল করেছেন। তন্মধ্যে চারখানা আসমানী কিতাব শ্রেষ্ঠ। যথাঃ (ক) তাওরাতঃ হযরত মূসা (আঃ)-এর ওপর নাযিলকৃত। (খ) যাবুরঃ হযরত দাউদ (আঃ)-এর ওপর নাযিলকৃত। (গ) ইঞ্জিলঃ হযরত ঈসা (আঃ)-এর ওপর নাযিলকৃত এবং (ঘ) পবিত্র কুরআন মাজীদঃ হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ওপর নাযিলকৃত।

১৫। রাসুলুল্লাহ (সাঃ)-এর সাহাবীগন (রাঃ) আল্লাহ তা'আলার বিশেষ সন্তুষ্টিপ্রাপ্ত। তাঁরা হকের মাপকাঠি। অর্থাৎ তাদের অনুসরণ রাসুলুল্লাহ (সাঃ)-এর অনুসরনের শামিল। কেননা তাদেরকে আল্লাহ তা'আলা রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর পূর্ণাজ্ঞ আনুগত্যকারীরুপে নির্বাচিত করেছেন এবং তাঁরা রাসুলুল্লাহ (সাঃ)-এর পদাংজ্ঞ অনুসরন করে জীবন ধন্য করেছেন। তাই তাঁরা দুনিয়াতে থাকতেই মহান আল্লাহ কত্রৃক সন্তুষ্টির সুসংবাদ লাভ করেছেন।

১৬। রাসুলুল্লাহ (সাঃ)-এর আহল বা পরিবারবর্গ তথা স্ত্রী, পুত্র ও কন্যা এবং তাঁদের মুবারক রক্তধারার সকলের প্রতি মহব্বত রাখা জরুরী।

১৭। আল্লাহ পাকের সমুদয় ঘোষনা (কুরআনের ইরশাদ) এবং রাসুলুল্লাহ (সাঃ)-এর সকল কথা(হাদীসসমূহ) সত্য বলে বিশ্বাস করা অপরিহার্য ও ঈমানের অন্তর্ভুক্ত। এটা ব্যতিত ঈমান পূর্ণতা লাভ করতে পারে না।

১৮। পবিত্র কুরআন ও হাদীসের মনগড়া ব্যাখ্যা করা যাবে না। অর্থাৎ সুবিধামতো তাঁর অর্থ-ব্যাখ্যা প্রদান করা কিংবা বাড়িয়ে বা কমিয়ে বলা যাবে না। বরং রাসুলুল্লাহ (সাঃ)থেকে শিক্ষালাভ করে সাহাবায়ে কিরাম, তাবিয়ীন ও তাবেয়ীনগন (রহঃ) কুরআন ও হাদীসের যে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষন পেশ করেছেন, তা-ই গ্রহণ করতে হবে।

১৯। কোন ফরজ, ওয়াজিব বা সুন্নাত কিংবা মুস্তাহাবকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা যাবে না। তেমনিভাবে কোন গুনাহকে হালাল তথা বৈধ জ্ঞান করা যাবে না।

২০। আল্লাহ পাকের আযাবের ভয় থেকে আতংকমুক্ত হওয়া যাবে না এবং আল্লাহ পাকের রহমত থেকে নিরাশ হওয়া যাবে না।

২১। অদৃষ্টের কথা কাউকে জিজ্ঞেস করা এবং অদৃষ্টের ব্যাপারে কারো উক্তি বিশ্বাস করা যাবে না।

২২। অদৃষ্ট ও গাইবের খবর একমাত্র আল্লাহ পাকই অবগত রয়েছেন। তিনি ছাড়া অন্যকেউ গাইবের বিষয়ে অবগত নয়। আর আল্লাহ তা'আলার জানানো ছাড়া কোন সৃষ্টিজীবের পক্ষে গাইবের কোন বিষয় জানা সম্ভব নয়।

২৩। কেউ মৃত্যুবরণ করলে, তাকে দাফন করা হলে অথবা দাফন করা সম্ভব না হলেও উভয় অবস্থাতেই আল্লাহ পাকের দু'জন ফেরেশতা মুনকার ও নাকীর তার নিকট আগমন করেন এবং তাকে প্রশ্ন করেন, তোমার মাবূদ কে? তোমার দ্বীন(ধর্ম) কী? এবং রাসুলুল্লাহ (সাঃ) সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন, ইনি কে? যদি মৃত ব্যক্তি ঈমানদার হয়, এবং সঠিক জবাব দেয়, তখন আল্লাহ পাকের দয়ায় তার জন্য জান্নাতের আরাম আয়েশের ব্যবস্থা করা হয়। পক্ষান্তরে মৃত ব্যক্তি ঈমানদার না হলে বা বদকার হলে, ফেরেশতাদ্বয়ের প্রশ্নের জবাবে সে বলে, "আমি জানি না, আমি জানি না"। তখন তাকে জাহান্নামের কঠিন শাস্তি দেয়া শুরু হয়-যা কিয়ামত পর্যন্ত বলবত থাকে।

২৪। আল্লাহ তা'আলা পবিত্র কুরআনে এবং রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর পবিত্র হাদীসে কিয়ামতের যে সমস্ত আলামত বর্ণনা করেছেন, তা অবশ্যই ঘটবে। যেমন, হযরত ইমাম মাহদী (আঃ) দুনিয়ায় আগমন করবেন, হযরত ঈসা (আঃ) আসমান থেকে অবতরন করবেন, কানা দাজ্জালের আবির্ভাব ঘটবে এবং ঈসা (আঃ) দাজ্জালকে হত্যা করবেন, ইয়াজুজ-মাজুজ নামক এক জাতি দুনিয়ায় ছড়িয়া পড়বে, 'দাব্বাতুল আরয' নামক এক অদ্ভুত জীব আবির্ভূত হবে এবং মানুষের সাথে কথা বলবে, হঠাত একদিন সূর্য পশ্চিম দিক থেকে উদয় হয়ে আবার পশ্চিম দিকেই অস্ত যাবে এবং তখন তবার দরজা বন্ধ হয়ে যাবে, পবিত্র কুরআন মাজীদ উঠএ যাবে এবং সমস্ত ইমানদার লোকেরা প্রাণত্যাগ করবে; তখন শুধু কাফিররাই দুনিয়ায় বিদ্যমান থাকবে, আর সেই অবস্থায়ই কিয়ামত কায়েম হবে।

২৫। কিয়ামতের সকল আলামত প্রকাশ পাওয়ার পরেই হযরত ঈসরাফীল (আঃ) শিঙ্গায় ফুক দিবেন। তখন সমস্ত আসমান ও যমীন ফেটে টুকরো  টুকরো হয়ে যাবে এবং পাহাড়্গুলো তুলার মত উড়তে থাকবে। সেসময় বিদ্যমান যাবতীয় জীব মারা যাবে। সে সময় একমাত্র আল্লাহ ছাড়া আর কেউ থাকবে না। এ অবস্থায় দীর্ঘদিন অতিবাহিত হবে।
অত;পর দ্বীতিয়বার সিঙ্গায় ফুক দেয়া হবে। তখন আলম জীবিত হয়ে উঠবে। পৃথিবীর শুরু থেকে শেষ পর্যন্তের সমস্ত মৃত লোক জীবিত হয়ে কিয়ামতের ময়দানে একত্রিত হবে।
তখন নেকী ও বদী পরিমাপের পাল্লা (মিযান) স্থাপন করা হবে এবং মানুষের কার্যসমূহ মাপা হবে। কেউ কেউ বিনা হিসেবে বেহেশতে গমনের অনুমতিপ্রাপ্ত হবেন। নেককারদের আমলনামা তাঁদের দান হাতে এবং বদকারদের আমলনামা তাঁদের বাম হাতে দেয়া হবে।
সেদিন রাসুলুল্লাহ (সাঃ) স্বীয় উম্মতদেরকে হাউজে কাউসারের শরবত পান করাবেন।
সকলেই পুলসিরাত পার হতে হবে। নেককারগন পুলসিরাত পার হয়ে আল্লাহ পাকের দয়ায় জান্নাতে গমন করবেন এবং পাপীরা পুলসিরাতে উপর থেকে নীচে অবস্থিত জাহান্নামে পতিত হবে।

২৬। -----------------------চলবে। 

আমাদের দূরবস্থার কারণ

মুসলমানদের দূরবস্থার কারণ

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নতের ইত্তেবা করে, সুন্নতের উপর আমল করে, নবীজির নুরানী আদর্শ অনুসরণ করে, সাহাবায়ে কেরাম দুনিয়াতে সম্মানিত হয়েছেন। আমরা আজ নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নত ও আদর্শ ছেড়ে চরম অপমানিত ও লাঞ্চিত হয়েছি। আজ আমাদের মাঝে এ ভয় ঢুকে পড়েছে যে, আমরা যদি অমুক সুন্নতের উপর আমল করি তাহলে লোকে আমাদেরকে অসামাজিক বলবে। তারা আমাদেরকে নিয়ে হাসি তামাশা করবে। ইংল্যান্ড, রাশিয়া, আমেরিকা আমাদেরকে নিয়ে টিটকারী করবে, হাসি তামাশা করবে। যার ফলকথা হলো আজ আমরা পৃথিবীতে অপমানিত হচ্ছি। নতুবা আজ বিশ্বের এক তৃতীয়াংশ মানুষ মুসলমান, বর্তমান বিশ্বে যা মুসলমান আছে পূর্বে এত সংখ্যক মুসলমান কখনও ছিল না। আজ মুসলমানদের কাছে যত সামান ও সামগ্রী আছে এমন সামগ্রী অতীতে ছিল না। কিন্তু রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলে গিয়েছেন, ভবিশ্যতে এমন এক জমানা আসবে যখন তোমাদের সংখ্যা অনেক বেশি হবে, কিন্তু তোমরা তখন এমন হবে যেন স্রোতে ভাসমান আবর্জনা যার নিজস্ব কোন ক্ষমতা নেই। আক আমাদের অবস্থাও এমন। আমরা আজ শত্রুদের খুশী করার জন্যে নিজেদের সবকিছু বিসর্জন দিয়েছি। নিজেদের আদর্শ ছেড়ে দিয়েছি। মাথা থেকে পা পর্যন্ত বিজাতীয় অনুকরণ করে শত্রুদেরকে এ প্রমাণ দিয়েছি যে, আমরা তোমাদের একান্ত অনুগত গোলাম। কিন্তু তারপরও প্রভুরা আমাদের ওপর খুশী নন। প্রতিদিন আমাদের মারছে। কখনও ইসরাঈল মারছে কখনও মারছে আমেরিকা আবার কখনও মারছে রাশিয়া। কখনও বসনিয়ার মুসলমানদের উপর জুলুম-নিরযাতন করা হচ্ছে। কখনও কাশ্মীরে মুসলমানেরা জুলুম অত্যাচার সহ্য করছে। হিন্দুস্তানের মুসলমান কাফের ও হিন্দুদের নির্যাতনের শিকার। প্রকৃত কথা হলো, মুসলমান যখন নবীজির সুন্নত বা আদর্শ ছেড়ে দিবে তখন তাদেরকে বিজাতির মার খাওয়া ছাড়া কোন গত্যন্ত্র থাকবে না। তাদেরকে পদে পদে লাঞ্চিত ও অপমানিত হতেই হবে। সুতরাং আমাদেরকে ইসলামী চেতনায় জেগে ওঠতে হবে, নিজস্ব স্বাতন্ত্রবজায় রাখার জন্য মরিয়া হয়ে উঠতে হবে জীবনযুদ্ধে।

Sunday, July 24, 2011

পর্দার নারী বাজারে কেন?

পর্দার নারী বাজারে কেন?

বর্তমান সমাজ হচ্ছে সভ্য ও শিক্ষিত সমাজ। অথচ কাজ-কর্মে দৃষ্টি দিলে দেখা যায় তারা যেন আদিকালের দিকে ফিরে যেতে চলেছে। আদিকালের মানুষ উলঙ্গ থাকত। কারণ হলো তারা কাপড় তৈরী করতে জানত না কিন্তু বর্তমানে তো কাপড়ের অভাব নেই। প্রচুর কাপড় উৎপাদিত হচ্ছে। তবুও আজ কেন এই উলঙ্গপনা?

নারীদের পোশাক দেখলে মনে হয় না যে, তারা নারী। নারী যেন পোশাকে পুরুষ থেকেও খোলা হয়ে যাচ্ছে। বর্তমান সমাজে দেখা যায়, নারী প্যান্ট, শার্ট, পাতলা কাপড়, ছোট পোশাক ইত্যাদি পরিধান করছে, চুলগুলি পুরুষের চাইতে ছোট করে রাখছে, কালারিং করছে। অপরদিকে পুরুষেরা নারী জাতির মত পোশাক পরে চুল রেখে নারী হতে চলেছে। হাদীছ শরীফে হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) বর্ণনা করেন- "রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেই পুরুষের প্রতি অভিসম্পাত করেছেন, যে নারীর মত পোশাক পড়ে"। অপর এক হাদীছে হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- "মহিলারা হল পর্দায় থাকার মানুষ কিন্তু তারা যখন পর্দা উপেক্ষা করে বাহিরে আসে, তখন শয়তান তাদের প্রতি উকি মারে"।

আজ ভাবতে অবাক লাগে, কত দ্রুত বাংলাদেশের নারীরা পর্দাকে বিসর্জন দিয়ে প্রগতিশীলা হয়ে উঠেছে। ওড়না এখন প্রায় আস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হবার পথে। আর যদিও বা পরা হয়, তার পরিধান পদ্ধতি উল্টো হয়ে গেছে- গলায় ঝুলিয়ে পাট দুটো পিঠের উপর ছড়িয়ে দেয়া এবং এর মাধ্যমে বক্ষকে বে আব্রু করা। সত্যিই অভিনব ফ্যাশন এবং নিত্য নতুন স্টাইলে আধুনিক পদ্ধতি। বেহায়পনার মধ্যে আরো রয়েছে- পাতলা কাপড়ের আটসাট সালোয়ার কামিজ, টাইট জিন্সের প্যান্ট, হাতাকাটা গেঞ্জী, অতি পাতলা কাপড়ের ব্লাউজ, বুকের কাছে ভি-কাট, ইউ-কাট সম্বলিত ব্লাউজ, পিঠের কাছে ছড়ানো ইউ-কাট সম্বলিত বাউজ, দৈর্ঘে ছোট করে উদর প্রদর্শন অর্থাৎ ব্লাউজ ও ব্রা-র সাইজ একাকার করে ফেলা, পেটিকোটের সম্মুখভাগ নাভির নিচে নামিয়ে আনা ইত্যাদি।

প্রিয়নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, "ঐ ব্যক্তির উপর আল্লাহ তা'আলার লানত হোক, যে কোন মহিলাকে ইচ্ছাকৃতভাবে দেখে। এমনিভাবে ঐ মহিলার উপরও আল্লাহর তা'আলার লানত হোক যে নিজেকে দেখায়"।

ভাবতেও অবাক লাগে আজ নারীরা সেজেগুজে রূপসী সেজে বয়ফ্রেন্ডদের হাত ধরে লেকে, পার্কে, সিনেমায়, বারে, চিড়িয়াখানায়, জাদুঘরে প্রভৃতি স্থানে ঘুরে বেড়াতে না পারলে জীবনটাকে বৃথা মনে করে। আর বন্ধুরাও ভ্রমরের ন্যায় উড়ে উড়ে মধুপান করে। অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে পুরুষদেরও আজকাল বিবাহটা একটা ব্যবসায়ে পরিণত হয়েছে। যৌতুক মনের মত না হলে ছেলেরা বিবাহ করতে রাজী হয় না। কারণ জৈবিক চাহিদা তো বিবাহ ব্যতীতই মিটাতে পারছে। তাই বিনা লাভে কেন ঝুকি মাথায় নিতে যাবে। বিবাহের পরেও তারা নিজের বিবাহিতা স্ত্রীকে বেগানা পুরুষের সাথে যেতে বারণ করে না। যেহেতু তারা যেভাবে ফুলে ফুলে উড়ে ভ্রমরের ন্যায় মধুপান তথা নারীর সুধা পান করে স্ত্রী ও তেমনি ভাবে পরপুরুষের সুধা পান করুক।

মহিলাদের সম্পর্কে আল্লাহ তা'আলা পবিত্র কোরআনে বলেন, "ইমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত করে এবং তাদের যৌনাঙ্গের হিফাযত করে। তারা যেন যা সাধারনত প্রকাশমান তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে এবং তারা যেন তাদের মাথার ওড়না বক্ষদেশে ফেলে রাখে এবং তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুষ্পুত্র, ভগ্নীপুত্র, স্ত্রীলোক অধিকারভোক্ত দাসী, যৌনকামনা মুক্ত পুরুষ ও বালক- যারা নারীদের গোপন সম্পর্কে অঙ্গ, তাদের ব্যতিত কারও কাছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না কর। তারা যেন তাদের গোপন সাজসজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোরে পদচারনা না করে। মু'মিনগন, তোমরা সবাই আল্লাহর কাছে তাওবাহ কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও"। (সূরা নূরঃ ৩১)

বর্তমান বিশ্বের মানুষ শান্তির অন্বেষায় নিত্য নতুন আইন প্রণয়ন করে অগনিত অর্থ ব্যয় করছে। কিন্তু যে উৎস থেকে ফিতনা ফাসাদ ছড়াচ্ছে, সেটা বন্ধ করার কেউ নেই। আজ যদি ফিতনা ফাসাদের মূল কারন উদঘাটন করার জন্য নিরপেক্ষ কোন তদন্ত পরিচালনা করা হয়, শতকরা ৫০ ভাগেরও বেশী সামাজিক অশান্তির কারণ নারী জাতির বেপরোয়া চালচলন।


 

ইভটিজিং

আমার প্রিয় মা ও বোনেরা

ইসলাম ধর্ম আপনাদের ইজ্জত রক্ষার্থে ব্যস্ত, আর আপনি সেই পাশ্চাত্যের বস্তাপচা সংস্কৃতি ও চালচলনকে মুক্তি ও উন্নতির সোপান মনে করে বসে আছেন? পশ্চিমে গিয়ে তো সূর্যও অন্ধকার হয়ে যায়, আলো হারিয়ে ফেলে, আপনারা পাশ্চাত্যের পিছনে কোন আলো তালাশ করছেন? একি রীতিমত বোকামী নয়? সর্বপ্রকার স্বাধীনতা ও অধিকারই নারীজাতিকে ইসলামে প্রদান করা হয়েছে।

কুরআনুল কারীমে নারী জাতির মর্যাদার স্বীকৃতিস্বরূপ 'সূরা নিসা' অবতীর্ণ করা হয়েছে। অথচ পুরুষদের নামে পৃথক কোন সূরা অবতীর্ণ করা হয়নি।আল্লাহর নবী মুহাম্মদ মোস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘোষনা দিয়েছেন, মায়ের পদতলে সন্তানের জান্নাত। স্ত্রীরা স্বামীর পরিচ্ছদ। কন্যা সন্তান লালন পালন করলে জান্নাতের ওয়াদা।

আজকে আমাদের মহিলাদের বেপরদাহীন ভাবে চলাফেরার কারণে তারা ইভটিজিং এর শিকার হচ্ছে।

আধা কেজি পাকা তেঁতুলকে লবন ও পোড়া মরিচ দিয়ে ভালভাবে মাখিয়ে যদি জিহ্বার সামনে আনা হয়, অতঃপর জিহ্বাকে যদি বলা হয়, জিহ্বা! ও জিহ্বা!! এখন যদি লালা আনো, তাহলে কঠোর শাস্তি দেয়া হবে। জিহ্বার পক্ষে এ আইন মানা অসম্ভব। প্রমাণ নিন, এই যে তেঁতুল মাখানোর কথা বললাম, এ কথা শুনতেই কার না জিহ্বায় পানি আসবে!

তেমনি মেয়েরা বেপর্দাভাবে সেজেগুজে যুবকদের সামনে দিয়ে বিভিন্ন ঢঙ্গে হেটে যাবে আর যুবকদের ইভটিজিং না করার জন্য শাসানো হবে- তা কেমনে হয়। তাই চিকিৎসা করতে হলে, প্রথমে রোগের উৎসমূল নির্মূল করতে হবে। তা না হলে সুফল পাওয়া যাবে না।

  • ইসলাম বিদ্বেষীরা ভালভাবেই জানে, মুসলিম জাতিকে ধংস করতে হলে, নারীকে ধর থেকে বের করতে হবে। পর্দা প্রথাকে উচ্ছেদ করে এবং নারীর রূপ সৌন্দর্য উন্মুক্ত করেই যুব সমাজকে ধ্বংস করা সম্ভব। তারা তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী অনেকদূর এগিয়ে গেছে। তাদের সফলতা ও আমাদের দুর্ভাগ্য রুপে ইভটিজিং আত্নপ্রকাশ করেছে। হযরত মুসা (আঃ) এর যুগে বাল'আম ইবনে বা'উরার কুপরামর্শে একটি মাত্র যিনার অপরাধে ৭০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। আমরা কি এ থেকে শিক্ষা নিতে পারি না?
  • পর্দা আল্লাহ প্রদত্ত একটি ফরজ বিধান। বর্তমান সমাজে এ বিধানকে ব্রীদ্ধাংলী দেখিয়ে মেয়েরা অর্ধনগ্ন হয়ে রাস্তায় নেমে পড়েছে। ফলে ইভটিজিং এর মত অভিশাপ জাতির ঘাড়ে চেপে বসেছে।

    এক্ষেত্রে বলতে হয়, খাবারকে ঢাকনাবিহীন রাখা যেমন খাবারে মাছি বসার অন্যতম কারণ, তেমনি মেয়েদের পর্দা না করাই ইভটিজিং এর অন্যতম কারণ।

  • মেয়েদের সকল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ পুরুষের নিকট লোভনীয়। তাই তারা যদি শালীন ও মার্জিত পোশাক ছেড়ে আধুনিকতার নামে অশালীন ও অমার্জিত পোশাক পরে পন্যের মতো অমূল্য সৌন্দর্যকে প্রকাশের জন্য দেহ প্রদর্শন করে, তাহলে বদলোকের যৌন লালসায় পড়ে ইভটিজিং্যের শিকার হবেই।

    পুরুষরা পেট-পিঠ বের করে বাইরে কিংবা অফিস আদালতে যাচ্ছেন না লজ্জা করে। কিন্তু আজ মেয়েদের সেই লজ্জাটুকুও নেই। তাই তারা বখাটেদের কুনজরে পড়ে।

কোন কাজে কী বলতে হয়

কোন কাজে কী বলতে হয়

  • কাজের শুরুতে-বিসমিল্লাহ
  • খাওয়ার শুরুতে-বিসমল্লাহি ওয়া আলা বারাজাতিল্লাহ।
  • কাজের ইচ্ছা ব্যক্ত করতে-ইনশাল্লাহ।
  • কাজের গুরুত্ব প্রকাশে-সুবহানাল্লাহ।
  • কৃতজ্ঞতা প্রকাশে- আলহামদুলিল্লাহ
  • প্রশংসায় বা মূল্যায়নে- মাশাআল্লাহ।
  • বিপদাপদে- ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।
  • ধন্যবাদ জ্ঞাপনে- জাযাকাল্লাহ।
  • হাঁচি দেয়ার পরে- আলহামদুলিল্লাহ।
  • হাঁচির দু'আর জবাবে- ইয়ারহামুকাল্লাহ।
  • গুনাহ মাফের জন্য- আস্তাগফিরুল্লাহ।
  • দানের বেলায়- ফী সাবিলিল্লাহ।
  • বিদায় বেলায়- ফী আমানিল্লাহ।
  • উপরে উঠার সময়- আল্লাহু আকবর

আসুন নিজেদের মুহাসাবা করি

আসুন-নিজেদের মুহাসাবা করি

ইসলাম প্রকৃতির ধর্ম। সকল মানুষ জন্মসূত্রে মুসলমান। কিন্তু পরিবেশ, পারিপার্শ্বিকতা, পরিস্থিতি, শিক্ষা ও কৃষ্টির প্রভাবে কারো মুসলমানত্তে বিপর্যয় নেমে আসে। মানুষ তার জ্ঞান পরিধি অনুসারে জবাবদিহিতাধীন। দ্বীনের মৌলিক বিষয়াদি মোটামোটি সকল মুসলমানেরই জানা। নামায, রোযা, সত্যবাদিতা, ন্যয়পরায়ণতা, হালাল গ্রহণ ইত্যাদি ফরজ- এতা সবাই জানেন। গান-বাধ্য, পরদাহীনতা, ব্যভিচার, অবিচার, সুদ, ঘুষ প্রভৃতি হারাম- তাও সকলে জানেন। কিন্তু শুধু জানলে মুসলমানিত্ব হয় না, তা সর্বোপরি পালনই মুসলমানিত্তের মাপকাঠি।

দ্বিতীয় বৃহত্তম সংখাগরিষ্ঠ রাষ্ট্র বাংলাদেশ। এদেশের জনগনের শতকরা ৯০ জন মুসলমান। এদেশের মুসলমানের সংখ্যা প্রায় ১০ কোটি। আমাদের এ উল্লেখযোগ্য সংখ্যার কতজন পুরোপুরি দ্বীন মেনে চলেন? লাখে ক'জন হবেন যে, তারা সর্বতোভাবে যথাযথ দ্বীন পালনে পূর্ণ তৎপর? অনেকেই আমরা রীতিমত নামায পড়ি না। রোযার ব্যপারে সুবিধার তালাশি। হজ্জ-যাকাতের ব্যপারে বে-তোয়াক্কা। অথচ এগুলো দ্বীনের মূল স্তম্ভ। তদোপরি পারিবারিক দায়িত্ব ও সামাজিক কর্তব্য সম্পর্কে অচেতন। সুদ-ঘুষ দেদারসে দেয়া নেয়া হচ্ছে। মিত্থ্যাচার-প্রতারণা অবাধে চলছে। স্বার্থ উদ্ধারে যেন মোহান্ধ। খাওয়া-পরায় বাছ বিচার নাই।

আর অপসংস্কৃতির ভয়াবহ আক্রমনের ব্যপার তো আরো কারণ। বেপর্দা মেয়েদের লাগামহীন বিচরণের পরিবেশে মুসলমানিত্তই আজ প্রশ্নের সম্মুখীন। ঘরে ঘরে উন্মুক্ত অশ্লীল টিভি, ভিসিডি ও গান-বাদ্যের দাপটে দ্বীনদারী ধুলাপ্লুত। পরিস্থিতির ভয়াবহতায় দ্বীন ঈমানই যেন প্রাণফাটা রোদনরত।

আমাদের একি করুন হাল! মুসলমান দাবী করছি, কিন্তু আমাদের ক'জনের আছে মুসলমানী আমল? সময় থাকতে আমরা কর্তব্য নির্ধারণ করে নিজেদেরকে সংশোধনে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে পারি। পরকালীন মুক্তির জন্য এ ছাড়া গত্যন্তর নেই।

Saturday, July 23, 2011

নববধুর জন্য ৮টি কাজ

নববধুর জন্য ৮টি গুরুত্বপূর্ণ নছীহত

বুযুরগানেদীনগন মহিলাদের ৮টি কাজের উপর বিশেষভাবে তাগিদ দিয়াছেন, যার দ্বারা মহিলাদের সহজে দ্বীনের উপর চলা যায়। মহিলাদের উক্ত ৮টি কাজ পবিত্র কুরআন ও হাদীছের ভিত্তিতে সারনির্যাস রুপে নির্ণয় করা হয়েছে।

(১) পাঁচ ওয়াক্ত নামায সঠিক সময়ে আদায় করা। মাহে রমজানে রোজা রাখা। মালদার হলে নিয়মিত যাকাত দেয়া, সামর্থ হলে মাহরামের সাথে হজ্ব আদায় করা।

(২) প্রতিদিন ঘরে কুরআন পাক তিলাওয়াত করা।

(৩) সকাল বিকাল আল্লাহ পাকের জিকির করা।

(৪) প্রতিদিন বুজুরগানেদীনের লিখিত কিতাব পড়া।

(৫) স্বামীর আদেশ অনুযায়ী চলা। (অবিবাহিতদের জন্য পিতা মাতার আদেশ মানা)

(৬) মাহরাম পুরুষদের দ্বীনের পথে চলার জন্য উদ্ধুদ্ধ করা।

(৭) সন্তাদেরকে দ্বীনী ইলম শিক্ষা দেয়া।

(৮) জাঁকজমকহীন সাধাসিধা ছুন্নাতী জীবন যাপন করা।

এই ৮টি কাজ মহিলাদের সামান্য একটু মুজাহাদার দ্বারা সহজ থেকে সহজতর হয়ে যায়।