Monday, August 8, 2011

মৃত্যু ও তার যাতনা

 http://islamus.wordpress.com/2011/08/08/মৃত্যু-ও-তার-যাতনা/


মৃত্যু ও তার যাতনা
মৃত্যুকষ্ট উপদেশস্বরুপ
হযরত হাসান (রাঃ) বলেন, হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মৃত্যুকষ্ট তলোয়ারের তিনশ আঘাত সমতূল্য। তিনি আরো বলেনঃ মৃত্যুকষ্ট আমার উম্মতের জন্য উপদেশস্বরুপ।
পাঁচটি বিষয়কে পাচটির পূর্বে গনীমত মনে করো
হযরত মায়মুন বিন মাহরান (রহঃ) থেকে বর্ণিত, হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ পাঁচটি বিষয়কে তোমরা অন্য পাচটির পূর্বে গনীমত মনে করো। যথাঃ
  ১। বার্ধক্যের পূর্বে যৌবনকালকে,
  ২। অসুস্থতার পূর্বে সুস্থতাকে,
  ৩। ব্যস্ততার পূর্বে অবসর সময়কে,
  ৪। দরিদ্রতার পূর্বে সম্পদশালিতাকে, এবং
  ৫। মৃত্যুর পূর্বে জীবনকে
যৌবনকাল তথা শক্তি-সামর্থ থাকা অবস্থায় যতটুকু ইবাদত ও মেহনত করা যায়, বার্ধ্যক্যে উপনীত হওয়ার পর তা কল্পনা করাও অসম্ভব। দ্বিতীয়ত যৌবনকালে যখন গুনাহের কাজ ও অলসতায় অভ্যস্ত হয়ে পড়ে, তখন বার্ধ্যক্যে উপনীত হওয়ার পর তা দূর করা খুবই কঠিন। সুস্থতার সময়টা বড়ই মূল্যবান। অসুস্থ হলে পরে তা উপলব্ধি করা যায়। তাই সুস্থতার সময়কে নষ্ট করা অত্যন্ত ক্ষতিকর।

Thursday, August 4, 2011

খোদাভীতির আলামত

আল্লাহর প্রতি ভয়ঃ শুদ্ধ ঈমানের লক্ষণ

ফেরেশতাদের মাঝে আল্লাহর ভয়


হযরত আদী বিন আরতাত (রাঃ) বর্ণনা করেছেন। হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ সাত আকাশের ফেরেশতাগন যখন সৃষ্টি হয়েছেন, ঠিক তখন থেকেই তাঁরা সেজদায় নত হয়ে আছেন। এরপরেও তাঁরা আল্লাহর ভয়ে কাঁপছেন! তদুপরি তাঁরা যখন কেয়ামতের ময়দানে সেজদা থেকে তাদের মাথা উঠাবেন, তখন বলবেন, হে আল্লাহ! আমরা তোমার ইবাদতের হক আদায় করতে পারি নি।

জাহান্নামের ভয়

হযরত আবু মায়সারা রাদিয়াল্লাহু আনহু রাতের বেলা যখন শুবার যেতেন, তখন বলতেন, আফসোস! যদি আমার মা আমাকে জন্ম না দিতেন। এসব কথা শুনে তার স্ত্রী বলতেনঃ আপনি এসব কী বলছেন! আল্লাহ তো আপনাকে ঈমান ও ইসলামের মতো মহানেয়ামত দান করেছেন। তখন জবাবে তিনি বলতেনঃ তা তুমি সত্য বলেছ। এতে কোন সন্দেহ নেই। এই নেয়ামত অনেক বড় নেয়ামত। কিন্তু আমাদেরকে উদ্দেশ্য করে তো বলা হয়েছে, সকলকেই জাহান্নামের উপর দিয়ে অতিক্রম করতে হবে। কিন্তু একথা বলা হয়নি যে, জাহান্নামের উপরের পথ অতিক্রম করতে পারব কি পারব না!

খোদাভীতির আলামত

ইমাম ফকীহ আবুল লায়স সমরকন্দী (রহঃ) বলেছেনঃ আল্লাহর প্রতি ভয় থাকলে তা সাতটি জিনিসের মাধ্যমে প্রকাশ পায়। যথাঃ

১। জিহ্বা। আল্লাহর প্রতি ভয় থাকলে জিহ্বা দ্বারা মিথ্যা বের হয় না, গীবত বা পরনিন্দা করা হয় না, চোগলখুরি করা হয় না, অনর্থক কথা-বার্তা বলা হয় না। বরং জিহ্বা থেকে তখন জিকির ও কুরআন তেলাওয়াত বের হয়।\

২। পেট। আল্লাহর ভয় থাকলে শুধুই হালাল খাবার খাওয়া হয়। হারাম খাবার থেকে বেঁচে থাকা হয়। হালাল খাবারও খাওয়া হয় প্রয়োজন পরিমাণই। এর বেশি নই।

৩। চোখ। আল্লাহর ভয় থাকলে চোখ হারাম কিছু দেখে না। হালাল যাও দেখে তা দেখে শিক্ষা গ্রহণের উদ্দেশ্যে। আগ্রহ ও আকর্ষণের কারনে নয়।

৪। হাত। আল্লাহর ভয় থাকলে হাত দ্বারা আল্লাহপাকের অপছন্দনীয় কোন কাজ কিছুতেই করা হয় না। যা কিছু তখন হাত দ্বারা করা হয়, তা কেবল আল্লাহপাকের সন্তুষ্টি অর্জনের জন্যেই করা হয়।

৫। পা। আল্লাহর ভয় থাকলে তখন পা এমন কোন কাজের দিকে অগ্রসর হয় না, যা আল্লাহ তা'আলা অপছন্দ করেন। পক্ষান্তরে যে কাজে আল্লাহপাকের সন্তুষ্টি লাভ হবে সে কাজের দিকে পা দৌড়ে যায়।

৬। অন্তর। আল্লাহকে যে অন্তর ভয় করে, সেই অন্তরে হিংসা-বিদ্বেষ, ঘৃণা-শত্রুতা ইত্যাদি থাকতে পারে না। থাকে সেসবের স্থলে ভালবাসা-বন্ধুত্ব, সহানুভূতি-সহমর্মিতা এবং সম্মানবোধ।

৭। ইখলাস। আল্লাহকে যে ভয় করে, সে সবসময় ইখলাসকে খুঁজে বেড়ায়।আর ভয় করে, না জানি ইখলাস না থাকার কারণে আমার কোন আমল্টা নষ্ট হয়ে যায়। এমন মানুষদের উদ্দেশ্য করে আল-কুরয়ানে ইরশাদ হয়েছেঃ আখিরাতের মঙ্গল আপনার পালনকর্তা খোদাভীরুদের জন্যেই রেখেছেন।

ছয়টি বিশেষ গুণ

ছয়টি বিশেষ গুণ

হযরত আলী (রাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি নিজের মাঝে ছয়টি গুণ তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে, সে জাহান্নাম থেকে বাঁচতে এবং জান্নাতে প্রবেশ করতে পূর্ণ চেষ্টা করেছে। যথাঃ

১। আল্লাহকে চিনে তাঁর ইবাদত বন্দেগীতে লেগে যাওয়া।

২। শয়তানকে চিনে তার বিরোধিতায় উঠে পড়ে লাগা যাওয়া।

৩। সত্যকে বোঝার পর তার অনুসরণে লেগে যাওয়া।

৪। বাতীলের হাকীকত বোঝার পর তা হতে সম্পূর্ণরুপে বেঁচে থাকা।

৫। দুনিয়াকে চেনার পর তা পরিত্যাগ করা। এবং

৬। আখিরাতের চিন্তায় ও তালাশে মগ্ন থাকা।

চার কাজে অন্তর কঠিন হয়ে পড়ে

চারটি কাজ অন্তরকে কঠিন করে তুলে। যথাঃ

এক-পেট ভরে খাওয়া। (উল্লেখ্য, হালাল খাদ্য পেট ভরে খেলেও অন্তর কঠিন হয়ে যায়। সুতরাং হারাম খাদ্যের বিষয়ে আর প্রশ্নই ওঠে না।)

দুই- মন্দ লোকের সাহচর্য।

তিন- অতীতে কৃত গোনাহসমূহের কথা ভুলে যাওয়া। এবং

চার- দুনিয়ার আশা আকাক্ষা বেড়ে যাওয়া।

প্রতিটি মুসলমানের জন্যে উচিত হলো, দুনিয়ার চিন্তা কম করা। লোভ আশা আকাক্ষা কম করা। এবং আখিরাতের চিন্তা বেশি করে করা। আখিরাতের কল্যাণের জন্যে বেশি বেশি বন্দেগি করা। কারণ একথা কেউ জানে না যে, তার মরন কবে আসবে। কখন তাকে চলে যেতে হবে মাতা-পিতা, স্ত্রী-পুত্র এবং আত্নীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবের পাশাপাশি অর্থ সম্পদ সহ আরো কত কিছুর মায়াজাল ছিন্ন করে।

চারটি কাজ ছাড়া চারটি বিষয় দাবী করা অর্থহীন

চারটি ছাড়া চারটি বিষয়ের দাবি করা অর্থহীন

হযরত হাতেম যাহেদ (রহঃ) বলেন, যে ব্যক্তি চারটি কাজ না করে অপর চারতি বিষয়ের দাবি করে সে মিথ্যুক। যথাঃ

১। আল্লাহপাকের ভালবাসার দাবি করবে। কিন্তু তা পক্ষ থেকে হারাম কৃত কাজগুলো বর্জন করবে না।

২। জান্নাতকে ভালবাসার দাবি করবে, অথচ জান্নাত পাবার জন্যে চেষ্টা ফিকির করবে না। করবে না আল্লাহপাকের আনুগত্যও। তাহলে তার এই ভালবাসার দাবি মিথ্যা।

৩। নবীপ্রেমের দাবি করবে। কিন্তু তার চালচলন সম্পূর্ণই নববী আদর্শের পরিপন্থী হবে। এমন অবস্থায় তার নবীপ্রেমের দাবি শুধুই মিথ্যা বলে গন্য হবে।

৪। জান্নাতের সর্বোচ্চ মর্যাদা লাভের আশা করবে। কিন্তু সে গরীব দুঃখী অসহায় মানুষকে ভালবাসবে না, দূরে থাকবে তাদের সাহচর্য থেকে। তাহলে তার এই আশা করাটাও বিফলেই যাবে।

চারটি হাদীস

চারটি হাদীস

১। দুটি ক্ষুধার্ত নেকড়ে বাঘকে ছাগলের পালে ছেরে দেয়া হলে ছাগপালের জন্যে এই নেকরে বাঘ দুটি ততটুকু বিপজ্জনক বলে গণ্য হবে না, যতটুকু বিপজ্জনক হবে দ্বীনের জন্যে সম্পদ ও পদের লোভ। সূত্রঃ তিরমিযী শরীফ।

২। মানুষ একদিকে বুড়ো হতে থাকে, আর যুবক হতে থাকে তার মাঝে দুটি জিনিস। এর একটি হলো সম্পদ। দ্বিতীয়টি হল, দীর্ঘ জীবনের লোভ। সুত্রঃ বুখারী শরীফ।

৩। বুড়ো মানুষের হৃদয়মাঝে দুটি জিনিস সবসময় যুবক থাকে। এর একটি হলো, দুনিয়ার প্রতি ভালবাসা। আর দ্বিতীয়টি হলো, দীর্ঘ আকাক্ষা। সুত্রঃ বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ।

৪। যার বয়স আল্লাহপাক ষাট বছর পূর্ণ করে দিয়াছেন, তার কোন ওযর-আপত্তি তিনি কবুল করবেন না।

বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ যৌবনকালে মানুষ মনে করে, বার্ধক্য এখনো অনেক দূরে। বার্ধক্য দেখা দিলে তাওবা করে নিব। যে ব্যক্তি ষাট বছর বয়সে পৌছে গেল, তার জন্যে ওযর আপত্তি পেশ করার আর কোন অবকাশ রইল না। সুতরাং সে আর তাওবা করাকে বিলম্ব করতে পারে না। এখন তার জন্যে উচিত হলো, এখনই তাওবা করা।