Thursday, July 21, 2011

কালিমা তাইয়্যিবার দাবী


কালিমায়ে তায়্যিবার দাবী

ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হওয়ার প্রথম শর্তই হচ্ছে কালিমায়ে তাইয়্যিবা ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ’ পাঠ করা। এ কালিমা পাঠ ব্যতিরেকে কোন ব্যক্তি মুসলমান হতে পারে না। সেই সাথে এই কালিমার কথা অন্তরে ইয়াকীন বা বিশ্বাস করতে হবে। আর পূর্ণ মুসলমান হওয়ার জন্য এ কালিমার শিক্ষা অনুযায়ী আমল করা তথা মহান আল্লাহর ইবাদত করা জরুরী।

মুসলমানের ঘরে কোন সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ামাত্রই তার ডান কানে আজান এবং বাম কানে ইকামাত উচ্চারণ করতে হয়। এতে শয়তান নবজাতক শিশুর কানে কুমন্ত্রনা দিতে পারে না। মুসলমানের ঘরেই তার জন্ম হয়েছে এ কথা বুঝানোন জন্যই আযান ও ইকামাতের মাধ্যমে আল্লাহর মহান কালাম তাকে শুনাতে হয়। সদ্য জন্ম নেয়া এ শিশু সন্তানের যদিও আল্লাহর কালামের অর্থ অনুধাবন করার শাক্তি নেই, তবুও এর বরকতে সে এ সৌভাগ্য লাভ করতে পারবে যে, সে মুসলমান হিসেবে পরবর্তী জীবনে অতিবাহিত করতে পারবে। তেমনি বড়রা বা মা বাবা সন্তান কথা বলা শিখলেই প্রথমে কালিমায়ে তাইয়্যেবা মুখস্থ করাবেন। এর বাংলা অর্থও বুঝিয়ে দেবেন। অন্য ধর্ম থেকেও যদি কেউ ইসলামে দাখিল হতে চায়, তবে প্রথমেই তাকে এ পবিত্র বাক্যটির কথা হৃদয়ঙ্গম করতে হবে এবং বাক্যটি পাঠ করতে হবে। তাই এ বাক্যটির মাহাত্ম ও মর্যাদা অপরিসীম।

মহান আল্লাহ এ বিশভ্রক্ষ্মান্ড ও কীট-পতঙ্গ কত কিছুই না সৃষ্টি করেছেন। এ সব কিছুই আল্লাহ তা’আলার গুণ কীর্তনে মত্ত। সকল সৃষ্টিকেই তিনি তার ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছেন। সেই ইবাদতের দিক্ষা রয়েছে কালেমা তাইয়্যবায়।। পৃথিবীর জন্মলগ্ন থেকে যত নবী-রাসুল এসেছেন। সকলেই কালিমার দাওয়াত দিয়েছেন মানুষের কাছে।

এ ব্যাপারে মহান আল্লাহ বলেন, “(হে নবী) আপনার পূর্বে আমি যত নবী পাঠিয়েছি, তাদের সকলের প্রতি আমি ওহী যোগে এই আদেশ দিয়েছি যে,আমি ছাড়া আর কোন ইলাহ বা মাবুদ নেই। অতএব তোমরা সকলে কেবল আমারই দাসত্ত বা বন্দেগী কর”। (সূরাহ আম্বিয়া, আয়াত-২৫)

     পরাক্রমশালী আল্লাহ তা’আলা জিন ও ইনসানকে সৃষ্টি করেছেন তারই ইবাদতের জন্য। কিন্তু পৃথিবীতে অনেক মানুষ আল্লাহকে ভুলে দেব-দেবী, জড় বস্তু বা অন্য কারো পূজা বা উপাসনাই মত্ত হয়ে যায়। কেউ কেউ আবার সৃষ্টিকর্তা নেই বলেও দাবী করে। তাই তাদের হিদায়াতের জন্য আল্লাহ তা’আলা যুগে যুগে নবী রাসুল পাঠিয়েছেন এ কালিমা দিয়ে। মানুষকে যাবতীয় গোমরাহি ও ধ্বংসের গহ্বর থেকে বাঁচাতে পারে এ কালিমার বাণী। যারা এ কালিমায় দীক্ষিত হয়েছে তারাই মুমিন হয়ে মুক্তি লাভ করেছে, ইহ ও পরকালে অধিকারী হয়েছে চীরসুখের জান্নাতের। যারা এ কালিমা গ্রহন করেনি, তারা ইহকালের ধ্বংস ও গজবে নিপতিত হয়েছে,আর তাদের জন্য পরকালে রয়েছে ভয়াবহ জাহান্নাম।
হযরত আদম (আঃ)-এর উম্মতের জন্য কালিমা ছিল ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আদামু সাফিউল্লাহ’, হযরত ইবরাহিম (আঃ)-এর যামানায় তার উম্মতের কালিমা ছিল-‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ইব্রাহিমু খালীলুল্লাহ’। আর আখিরী নবীর উম্মত আমাদের জন্য কালিমা হল-‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’এ কালিমায় তাওহীদ ও রিসালাতের ঈমান বিদ্যমান।
  
    ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ’ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অর্থ‘আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নেই, হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) আল্লাহর প্রেরিত রাসূল’ সুতরাং এ কালীমার দাবী হল মহান আল্লাহর ইবাদত বন্দেগী করতে হবে রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর তরীকা অনুযায়ী। তাই মনচাহিভাবে কোন বন্দেগী করা যাবে না। মহান আল্লাহর হুকুম ও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আদর্শ জেনে সেই অনুযায়ী জীবন পরিচালিত করতে হবে। এর মধেই ইহ-পরকালীন সাফল্য নিহিত।
কালিমায়ে তাইয়্যিবা যখন যারাই পাঠ করেছেন। তাদের ঘায়েল করার জন্য শত্রুরা তৎপর ছিল। আমাদের নবীজীও এ পবিত্র বাণী পৌঁছাতে কত না যন্ত্রণা সয্য করেছেন। এমনকি নিজ গোত্রের মানুষেরাও তাঁর সাথে দুশমনী করেছে। এভাবে যখন যে নবী-ই এ বাণী পৌছানৌ্র কাজে নিয়োজিত হন, তখন ই তাঁর ওপর নেমে আসে নির্মম নির্যাতন। তবুও তারা থেমে যাননি। জীবনের সব কিছুর বিনিময়ে এ কালিমাকে পৃথিবীতে প্রতিষ্টিত করে গিয়েছেনআজও আমরা এ কালিমার ওপর আমল করলে চতুর্দিক থেকে বাধা আসবে, পরিবার ও সমাজে দ্বীনের কথা বলতে গেলে, জুলুম-নির্যাতন আসবে আমাদের ওপর। পরিবেশ-পরিস্থিতি আমাদেরকে ভিন্ন স্রোতে নিয়ে যেতে চাইবে। বেদীনী কালচার আমাদেরকে পদে পদে স্তব্দ করে দিতে চাইবে, কিন্তু এ সকল বাধা পেরিয়ে দ্বীনের ওপর টিকে থাকায়-ই আমাদের এ কালিমার দাবী পূরণের সাফল্য ও ব্যর্থতা নির্ভর করছে।
     
     আসুন, আমরা এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ আমাদের ঈমাণের দাবী পূরনে সফল হই। তখনই আমরা পরিপূর্ণ মুসলমানরুপে পরিগণিত হব।

No comments:

Post a Comment