Sunday, January 1, 2012

রাত জাগার অপকারিতা।


রাত জাগার অপকারিতা
রাত জাগার অপকারিতা অনেক, যেমন:
১. রাত জাগার ফলে সুন্নতের বিরোধিতা হয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এশার পূর্বে ঘুম ও এশার পর কথোপকথন অপছন্দ করতেন। আবু বারযাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত:
" أَنّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَكْرَهُ النَّوْمَ قَبْلَ الْعِشَاءِ وَالْحَدِيثَ بَعْدَهَا "
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এশার পূর্বে ঘুম ও পরে কথাবার্তা অপছন্দ করতেন”। বুখারি: (৫৩৭), মুসলিম: (১০৩২)
২. রাত জাগার ফলে অনেক সময় ফজর সালাত জমাতের সাথে আদায় করা সম্ভব হয় না, যা পূর্ণ রাত কিয়াম করার সমতুল্য। সহিহ মুসলিমে বর্ণিত:
«من صلَّى العشاء في جماعة، فكأنما قام نصف الليل، ومن صلى العشاء والفجر مع الجماعة، فكأنما قام الليل كله».
“যে ব্যক্তি জমাতের সাথে এশার সালাত আদায় করল, সে যেন অর্ধেক রাত কিয়াম করল, আর যে এশা ও ফজর জমাতের সাথে আদায় করল, সে যেন পূর্ণ রাত কিয়াম করল”। [মুসলিম]
৩. আল্লাহ তাআলা নিজ হিকমতের দাবিতে মানব জাতির স্বস্তি, প্রশান্তি ও ক্লান্তি থেকে বিশ্রাম গ্রহণের জন্য সৃষ্টি করেছেন রাত, যে রাত জাগল সে আল্লাহর হিকমতের বিপরীত কাজ করল।

৪. রাত জাগার ফলে দিনে ঘুমের চাপ সৃষ্টি হয়, যে কারণে ব্যক্তির পেশা, অথবা ব্যবসা অথবা কৃষি অথবা শিক্ষাদান অথবা চাকুরী ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অতএব রাত জাগা মানুষের প্রকৃতি পরিপন্থী, যে প্রকৃতির ওপর আল্লাহ তাদেরকে সৃষ্টি করেছেনরাত জাগার কারণে অনেক সময় পাঁচ ওয়াক্ত সালাত জমাতের সাথে আদায় করা সম্ভব হয় না, যা চরম বিপর্যয় ও মহা মুসিবত।
৫. রাত জাগার ফলে শারীরিক ও মানসিক বিভিন্ন রোগের সূত্রপাত ঘটেহ্যাঁ যে সুন্নত মোতাবেক রাত জেগে তাহাজ্জুদ, ইবাদাত, যিকর, দোয়া ও কুরআন তিলাওয়াতে মশগুল থাকে, তার রাত জাগা ক্ষতিকর নয়, বরং উপকারী। আমাদের সকলের কর্তব্য পার্থিব জগতের সংক্ষিপ্ত জীবনে ইবাদাতের জন্য প্রতিযোগিতার ময়দানে অবতীর্ণ হওয়া, যা আমাদের ইহকালীন ও পরকালীন সফলতার চাবিকাঠি
অতএব আল্লাহর রহমত প্রত্যাশাকারী ও তার শাস্তিতে ভীত প্রত্যেকের উচিত প্রথম রাতে ঘুমানো ও শেষ রাতে উঠা অতঃপর সালাত, ইবাদাত, দোয়া, ইস্তেগফার ও তওবা ইত্যাদিতে মশগুল থাকা। হাদিসে এসেছে, আল্লাহ তা‘আলা প্রতি রাতে দুনিয়ার আসমানে অবতরণ করেন, যখন রাতের এক তৃতীয়াংশ বাকি থাকে। অতঃপর তিনি বলেন:
«من يدعوني فأستجيب له؟ من يسألني فأعطيه؟ من يستغفرني فأغفر له؟»
“কে আমাকে আহ্বান করবে, আমি তার ডাকে সাড়া দেব? কে আমার নিকট প্রার্থনা করবে, আমি তাকে প্রদান করব? কে আমার নিকট ইস্তেগফার করবে, আমি তাকে ক্ষমা করব?”বুখারি: (১০৮৩), মুসলিম: (১২৬৭)
এসব ক্ষতি ও অপকারিতা হচ্ছে বৈধ কাজে রাত জাগার পরিণতি। আর হারাম কাজে রাত জাগার পরিণতি আরো মারাত্মক, আরো ভয়ঙ্কর, যেমন খেল-তামাশা, অশ্লীল বিনোদন ও পর্ণো সিরিয়াল দর্শনে মত্ত থাকাকারণ মানুষের সময় ও হায়াত হচ্ছে ইবাদাতের জন্য, তাকে এ সম্পর্কে অবশ্যই জিজ্ঞাসা করা হবে, তাকে এর জবাবদিহি করতে হবে, অতঃপর সে তার ভালো-মন্দ কর্মের ফল ভোগ করবে। তাকে অবশ্যই জিজ্ঞাসা করা হবে: তার দেখা, তার শ্রবণ করা ও তার অন্তরে গোপন বিষয় সম্পর্কে। আল্লাহ তাআলা বলেছেন:
﴿ إِنَّ ٱلسَّمۡعَ وَٱلۡبَصَرَ وَٱلۡفُؤَادَ كُلُّ أُوْلَٰٓئِكَ كَانَ عَنۡهُ مَسۡ‍ُٔولٗا ٣٦ ﴾ [الاسراء: ٣٦] 
নিশ্চয় কান, চোখ ও অন্তঃকরণ- এদের প্রতিটির ব্যাপারে সে জিজ্ঞাসিত হবে [সূরা ইসরা: (৩৬)] অন্যত্র ইরশাদ করনে:
﴿ فَوَرَبِّكَ لَنَسۡ‍َٔلَنَّهُمۡ أَجۡمَعِينَ ٩٢ عَمَّا كَانُواْ يَعۡمَلُونَ ٩٣ ﴾ [الحجر: ٩٢،  ٩٣] 
অতএব তোমার রবের কসম, আমি তাদের সকলকে অবশ্যই জেরা করব, তারা যা করত, সে সম্পর্কে [সূরা হিজর: (৯২-৯৩)]
অতএব বুদ্ধিমানের কাজ হচ্ছে এর সঠিক উত্তর প্রস্তুত করা, নিজের হিসাব নিজে কষা, সর্বদা গভীর দৃষ্টি রাখা: কি বলছে, কি করছে, কি নিচ্ছে ও দিচ্ছে! রাতে তাহাজ্জুদ আদায়কারী মুমিনদের প্রশংসা করে আল্লাহ তাআলা বলেন:
﴿ كَانُواْ قَلِيلٗا مِّنَ ٱلَّيۡلِ مَا يَهۡجَعُونَ ١٧ ﴾ [الذاريات: ١٧] 
রাতের সামান্য অংশই এরা ঘুমিয়ে কাটাতো [সূরা যারিয়াত: (১৭)] অন্যত্র ইরশাদ করেন:
﴿ تَتَجَافَىٰ جُنُوبُهُمۡ عَنِ ٱلۡمَضَاجِعِ يَدۡعُونَ رَبَّهُمۡ خَوۡفٗا وَطَمَعٗا وَمِمَّا رَزَقۡنَٰهُمۡ يُنفِقُونَ ١٦ فَلَا تَعۡلَمُ نَفۡسٞ مَّآ أُخۡفِيَ لَهُم مِّن قُرَّةِ أَعۡيُنٖ جَزَآءَۢ بِمَا كَانُواْ يَعۡمَلُونَ ١٧ ﴾ [السجدة : ١٦،  ١٧] 
তাদের পার্শ্বদেশ বিছানা থেকে আলাদা হয়। তারা ভয় ও আশা নিয়ে তাদের রবকে ডাকে। আর আমি তাদেরকে ‎‎যে রিযক দান করেছি, তা থেকে তারা ব্যয় করে। অতঃপর কোন ব্যক্তি জানে না তাদের জন্য চোখ জুড়ানো কী জিনিস লুকিয়ে রাখা হয়েছে, তারা যা করত, তার বিনিময়স্বরূপ [সূরা সাজদাহ: (১৬-১৭)]
চিন্তা করুন কিয়ামুল লাইল আদায়কারীর জন্য আল্লাহ কত নিয়ামত গোপন রেখেছেন!!! অন্তরের সব চাহিদা পূরণ করা হবে: যা কোন চোখ দেখেনি, যা কোন কান শ্রবণ করেনি, মানুষের অন্তরে যার কল্পনা পর্যন্ত হয়নি। আল্লাহ তাআলা বলেছেন:
﴿ أَمَّنۡ هُوَ قَٰنِتٌ ءَانَآءَ ٱلَّيۡلِ سَاجِدٗا وَقَآئِمٗا يَحۡذَرُ ٱلۡأٓخِرَةَ وَيَرۡجُواْ رَحۡمَةَ رَبِّهِۦۗ قُلۡ هَلۡ يَسۡتَوِي ٱلَّذِينَ يَعۡلَمُونَ وَٱلَّذِينَ لَا يَعۡلَمُونَۗ إِنَّمَا يَتَذَكَّرُ أُوْلُواْ ٱلۡأَلۡبَٰبِ ٩ ﴾ [الزمر: ٩] 
যে ব্যক্তি রাতের প্রহরে সিজদাবনত হয়ে ও দাঁড়িয়ে আনুগত্য প্রকাশ করে, আখিরাতকে ভয় করে এবং তার রব-এর রহমত প্রত্যাশা করে (সে কি তার সমান যে এরূপ করে না) বল, ‘যারা জানে আর যারা জানে না তারা কি সমান?’ বিবেকবান লোকেরাই কেবল উপদেশ গ্রহণ করে [সূরা যুমার: (৯)]
কিয়ামুল লাইল সম্পর্কে ইমাম তিরমিযি মুয়ায ইব্‌ন জাবাল রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত করেন, হাদিসের অংশ:
" أَلَا أَدُلُّكَ عَلَى أَبْوَابِ الْخَيْرِ: الصَّوْمُ جُنَّةٌ، وَالصَّدَقَةُ تُطْفِئُ الْخَطِيئَةَ كَمَا يُطْفِئُ الْمَاءُ النَّارَ، وَصَلَاةُ الرَّجُلِ مِنْ جَوْفِ اللَّيْلِ
“... আমি কি তোমাকে কল্যাণের পথগুলো বলে দেব না: সওম ঢাল। সদাকা পাপ মোচন করে, যেমন পানি অগ্নি নির্বাপণ করে, অনুরূপ ব্যক্তির সালাত রাতের মধ্যভাগে ...” তিরমিযি: (২৫৫৮), ইমাম তিরমিযি হাদিসটি হাসান ও সহিহ বলেছেন। আল্লাহ তাআলা শেষ রাতে দুনিয়ার আসমানে অবতরণ করেন যখন এক তৃতীয়াংশ বাকি থাকে। তিনি বলেন:
«من يدعوني فأستجيب له؟ من يسألني فأعطيه؟ من يستغفرني فأغفر له؟ حتى يطلع الفجر»
“কে আমাকে আহ্বান করবে, আমি তার ডাকে সাড়া দেব? কে আমার নিকট প্রার্থনা করবে, আমি তাকে প্রদান করব? কে আমার নিকট ইস্তেগফার করবে, আমি তাকে ক্ষমা করব? যতক্ষণ না ফজর উদিত হয়”[বুখারি ও মুসলিম]
আফসোস! বর্তমান যুগে অধিকাংশ লোক এ ফযিলত থেকে বঞ্চিত, বিশেষ করে যারা অর্ধেক রাত পর্যন্ত নাচ-গান ও অশ্লীল বিনোদনে মেতে থাকে, অতঃপর ফজর সালাত সূর্য উঠার পর অসময়ে কাযা করে। আহ্! কত বড় বিপর্যয়! কত বড় মুসিবত!

No comments:

Post a Comment