Sunday, January 1, 2012

ইসলাম বিনষ্টকারী বস্তু সমূহ


ইসলাম বিনষ্টকারী বস্তু সমূহ
ইসলামকে বিনষ্ট করে এমন বস্তু দশটি :
এক : আল্লাহর ইবাদাতে কাউকে শরিক বা অংশীদার করা। আল্লাহ বলেন: নিশ্চয়ই আল্লাহ ইবাদাতে তার সাথে কাউকে শরিক বা অংশীদার মানাকে ক্ষমা করবেন না, এতদ্ব্যতীত যা কিছু আছে তা যাকে ইচ্ছা করেন ক্ষমা করবেন। [সূরা আন্‌-নিসা: ১১৬]
আরও বলেন : নিশ্চয়ই যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করে তার উপর আল্লাহ তাআলা জান্নাত হারাম করে দিয়েছেন, তার আবাস হবে জাহান্নামে, আর অত্যাচারী (শির্ককারী)-দের কোন সাহায্যকারী নেই। [সূরা আল-মায়েদা: ৭২]
আর এই শির্ক হিসেবে গণ্য হবে কবর অথবা মূর্তির জন্য কোন কিছু জবেহ করা।


দুই : যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তার মধ্যে কোনো মাধ্যম নির্ধারণ করে তাদের কাছে কিছু চাইবে ও তাদের সুপারিশ প্রার্থনা করবে এবং তাদের উপর ভরসা করবে, সে ব্যক্তি উম্মতের সর্বসম্মত মতে কাফের হয়ে যাবে।

তিন : যে কেউ মুশরিকদের (যারা আল্লাহর ইবাদতে এবং তার সৃষ্টিগত সার্বভৌমত্বে অন্য কাউকে অংশীদার মনে করে তাদেরকে) কাফের বলবে না বা তাদের কাফের হওয়া সম্পর্কে সন্দেহ পোষণ করবে অথবা তাদের দীনকে সঠিক মনে করবে, সে উম্মতের ঐক্যমত্যে কাফের বলে বিবেচিত হবে।

চার : যে ব্যক্তি মনে করবে যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রদর্শিত পথের চেয়ে অন্য কারো প্রদর্শিত পথ বেশি পূর্ণাঙ্গ, অথবা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শাসন-প্রণালীর চেয়ে অন্য কারো শাসন প্রণালী বেশি ভাল; যেমন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বিচার-পদ্ধতির উপর তাগুতি-শক্তির (আল্লাহদ্রোহী শক্তির) বিচার-ব্যবস্থাকে প্রাধান্য দেয় তাহলে সে কাফেরদের মধ্যে গণ্য হবে।

পাঁচ : রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে আদর্শ নিয়ে এসেছেন এর সামান্য কিছুও যদি কেউ অপছন্দ করে তবে সে কাফের হয়ে যাবে, যদিও সে (অপছন্দ করার পাশাপাশি) তার উপর আমল করে থাকে।[1]

ছয় : রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বর্ণিত দীনের (জীবন বিধানের) সামান্যতম কিছু নিয়ে যদি কেউ ঠাট্টা করে বা দীনের কোন পুণ্য বা শাস্তি নিয়ে ইয়ার্কিকরে তবে সেও কাফের হয়ে যাবে।
তার প্রমাণ: আল্লাহ তাআলার বাণী: বলুন: তোমরা কি আল্লাহ ও তাঁর আয়াত (শরয়ি বা প্রাকৃতিক নিদর্শনাবলি) এবং তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাথে ঠাট্টা করছ? তোমরা কোনো প্রকার ওজর পেশ করো না, কারণ তোমরা ঈমান আনার পরে কাফের হয়ে গিয়েছ। [সূরা আত্‌-তাওবা: ৬৫, ৬৬]

সাত : যাদু, বান, টোনা এর দ্বারা সম্পর্ক বিচ্যুতি ঘটানো বা সম্পর্ক স্থাপন করানোযদি কেউ এগুলো করে বা করতে রাজি হয় তবে সে কাফের হয়ে যাবে।
এর প্রমাণ কোরআনের বাণী : তারা দুজন (হারুত মারুত) কাউকে তা (যাদু) শিক্ষা দেওয়ার পূর্বে অবশ্যই বলে যে, আমরা তো কেবল ফিতনা বা পরীক্ষা স্বরূপ। সুতরাং তোমরা কুফরই করো না। [সূরা আল-বাকারা: ১০২]

আট : মুশরিকদের (যারা আল্লাহর ইবাদতে বা সার্বভৌমত্বে কাউকে অংশীদার বানায় তাদের)-কে মুসলমানদের উপর সাহায্য-সহযোগিতা করা।
এর দলিল আল্লাহর বাণী: তোমাদের থেকে যারা তাদের (মুশরিকদের)-কে মুরুব্বি বা বন্ধু মনে করবে তারা তাদের দলের অন্তর্ভুক্ত হবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা অত্যাচারী কোন জাতিকে সঠিক পথের দিশা দেন না বা অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছান না। [সূরা আল-মায়েদা: ৫১]

নয় : যে এ-কথা বিশ্বাস করবে যে, যেমনিভাবে খিজির আলাইহিস্‌সালাম এর জন্য মুসা আলাইহিস্‌সালাম এর শরিয়তের বাইরে থাকা সম্ভব হয়েছিল তেমনিভাবে কারো কারো জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রবর্তিত শরীয়ত থেকে বাইরে থাকা সম্ভব, সেও কাফের বলে গণ্য হবে।

দশ: আল্লাহর দীন থেকে বিমুখ হওয়া, দীন শিখতে বা দীনের আদেশ নিষেধ অনুসারে কাজ করার ব্যাপারে গুরুত্বহীন থাকে।
এর দলিল আল্লাহর বাণী: তার চেয়ে কে বেশী অত্যাচারী যাকে আল্লাহর আয়াতসমূহ স্মরণ করিয়ে দেওয়ার পর সে তা এড়িয়ে গেল, নিশ্চয়ই আমি পাপিষ্ঠদের থেকে প্রতিশোধ নেব । [সূরা আস্‌-সাজদাহ: ২২]

এ-সমস্ত ঈমান বিনষ্টকারী বস্তু, ঠাট্টা করেই বলুক আর মন থেকে বলুক অথবা ভয়ে ভীত হয়েই বলুক, যেকোনো লোক এ-সমস্ত কাজের কোনো একটি করলে কাফের বলে বিবেচিত হবে। তবে যাকে জোর করে এ রকম কোন কাজ করতে বাধ্য করা হয়েছে তার হুকুম আলাদা।
এ সবগুলোই অত্যন্ত বিপজ্জনক ও অত্যধিক হারে সংগঠিত হয়ে থাকে। সুতরাং মুসলিম মাত্রই এগুলো থেকে সাবধানতা অবলম্বন করা ও এগুলো থেকে বেঁচে থাকা বাঞ্ছনীয়।
আমরা আল্লাহর কাছে তার আযাব-গজবে পড়া ও তাঁর কঠিন শাস্তিতে নিপতিত হওয়া থেকে আশ্রয় চাচ্ছি।


[1] এর প্রমাণ কোরআনের বাণী: আর এটা (জাহান্নামে যাওয়া) এ-জন্যই যে, তারা আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন তা অপছন্দ করেছে, ফলে তিনি তাদের কর্মকাণ্ড নষ্ট করে দিয়েছেন। [সূরা মুহাম্মাদ: ৯]

No comments:

Post a Comment