Sunday, January 1, 2012

ঘুমের হিকমত ও উপকারিতা


ঘুমের হিকমত ও উপকারিতা

আল্লাহ তাআলা বলেছেন:
﴿ وَجَعَلۡنَا نَوۡمَكُمۡ سُبَاتٗا ٩ وَجَعَلۡنَا ٱلَّيۡلَ لِبَاسٗا ١٠ وَجَعَلۡنَا ٱلنَّهَارَ مَعَاشٗا ١١ ﴾ [النبا: ٩،  ١١] 
আর আমি তোমাদের নিদ্রাকে করেছি বিশ্রাম। আর আমি রাতকে করেছি আবরণ। আর আমি দিনকে করেছি জীবিকার্জনের সময় [সূরা নাবা: (৯-১১)]
ঘুম আল্লাহর নিখুঁত পরিকল্পনার ফল। ঘুম মানুষের স্বস্তি আনয়ন করে, দিনের কঠোর পরিশ্রম ও কর্ম-ব্যস্ততা থেকে মুক্তি দেয়। ঘুম না মৃত্যু-না জীবন বরং উভয়ের মধ্যকার এক বিশেষ অবস্থা, শরীর ও অস্থির প্রশান্তি বিধায়কদিনের নানান কোলাহল ও কর্ম-ক্লান্তির বিপরীতে রয়েছে রাতের পিনপতন নীরবতাসব কিছু এমন সূক্ষ্ম ও নিখুঁতভাবে সম্পন্ন হয়, যা মানুষের চিন্তার অতীত, যেখানে তাদের ইচ্ছার কোন দখল নেই। জেগে আছে, অথচ জানে না কিভাবে জেগে আছে! ঘুমিয়ে আছে, অথচ জানে না কিভাবে ঘুমিয়ে আছে! এসব পর্যবেক্ষণ করার ক্ষমতা তার নেই। এখানে বিদ্যমান জীব জগতের গূঢ় রহস্য, যা তার স্রষ্টা ব্যতীত কেউ জানে না। কোন প্রাণী লাগাতার নির্ঘুম থাকতে পারে না, যে কৃত্রিম উপায়ে চেষ্টা করবে, তার মৃত্যু নিশ্চিত।

শরীর ও অস্থির প্রয়োজন ছাড়া আরো অনেক উপকারিতা রয়েছে ঘুমে। যেমন ঘুম আত্মার প্রশান্তি, যার স্পর্শ পাওয়া মাত্র ব্যক্তির হাত ফসকে অস্ত্র-ঢাল সব মাটিতে পড়ে যায়, ইচ্ছা বা অনিচ্ছায়মুহূর্তের জন্য তলীয়ে যায় সে প্রশান্তির অতল গহীনে, যার প্রয়োজন তার নিকট খাদ্য-পানির চেয়ে কম নয়। এর মধ্যে ঘটে যায় কতক সময় অলৌকিক ঘটনাযেমন চোখের ঝিমুনি, শরীরের মন্থরতা, অস্থির নিষ্ক্রিয়তা, অন্তরের বেচঈনি ও মনের ভীতিকর অবস্থা। এ হালত বেশী দীর্ঘায়ু হয় না, কিন্তু ব্যক্তির জীবনে এনে দেয় পরিপূর্ণ বিপ্লব। এর ফলে তার শুধু শক্তিই বৃদ্ধি পায় না, বরং সে নিজে শক্তিতে পরিণত হয়, যেন নতুন করে জাগ্রত হল, সাহস পেল ও ভয় দূরীভূত হলযেরূপ ঘটেছিল বদর ও উহুদ যুদ্ধে মুসলিম মুজাহিদ বাহিনীতে। তাই অনুগ্রহ প্রকাশ করে আল্লাহ তাআলা বলেন:
﴿ إِذۡ يُغَشِّيكُمُ ٱلنُّعَاسَ أَمَنَةٗ مِّنۡهُ ١١ ﴾ [الانفال: ١١] 
স্মরণ কর, যখন তিনি তোমাদেরকে তন্দ্রায় আচ্ছন্ন করেন তাঁর পক্ষ থেকে নিরাপত্তাস্বরূপ[সূরা আনফাল: (১১)] অন্যত্র বলেন:
﴿ ثُمَّ أَنزَلَ عَلَيۡكُم مِّنۢ بَعۡدِ ٱلۡغَمِّ أَمَنَةٗ نُّعَاسٗا يَغۡشَىٰ طَآئِفَةٗ مِّنكُمۡۖ ١٥٤ ﴾ [ال عمران: ١٥٤] 
তারপর তিনি তোমাদের উপর দুশ্চিন্তার পর নাযিল করলেন প্রশান্ত তন্দ্রা, যা তোমাদের মধ্য থেকে একদলকে ঢেকে ফেলেছিল[সূরা আলে-ইমরান: (১৫৪)]
অতএব দিনের ব্যস্ততা ও কর্ম ক্লান্তি থেকে মুক্তির জন্য ঘুম গুরুত্বপূর্ণ এক অধ্যায়, আল্লাহর বিশেষ কুদরত, যেখানে রয়েছে অফুরন্ত হিকমত ও রহস্য, যা তিনি ব্যতীত কেউ জানে না। এ কারণে ঘুমের আলোচনা কুরআনে এসেছে বারবার, তাতে চিন্তা, গবেষণা ও তা থেকে উপদেশ গ্রহণ করার জন্য বারবার তাগিদ প্রদান করা হয়েছে
সুবহানাল্লাহ! আল্লাহ তাআলা এ বিশ্ব চরাচরকে পুরোপুরি জীব জগতের অনুকূল ও অনুগামী করে দিয়েছেন। মানুষ যখন ঘুমায়, পুরো জগত তখন ঘুমায়। তিনি রাতকে অন্ধকার আচ্ছাদন দ্বারা ঢেকে দিয়েছেন, ফলে স্বস্তি ও প্রশান্তি লাভের জন্য সকলে রাতের আচ্ছাদনে অদৃশ্য হয়ে যায়। অতঃপর রাতের ওপর দিনের বিচ্ছুরণ ঘটান, ফলে পুনরায় সবাই জীবিকার অন্বেষণ ও কর্ম-ব্যস্ততায় মগ্ন হয়। এভাবে মহান আল্লাহ তার সৃষ্ট জগতের ভারসাম্য রক্ষা করেন, যে কারণে পৃথিবী বসবাস উপযোগী। প্রকৃতির এ সাধারণ নিয়মে জীব জগত যেরূপ অভ্যস্ত, অনুরূপ জীব জগতের সাধারণ স্বভাবের অনুগামী প্রকৃতি। একে অপরের পরিপূরক, একটি ব্যতীত অপরটি অসম্পূর্ণ, উভয়ের সমন্বয়ে এ সুন্দর পৃথিবী। এখানে আল্লাহর কুদরতের প্রমাণ, এ হচ্ছে তার নিখুঁত ও ত্রুটিহীন নির্মাণ। সুবহানাল্লাহ! {তাফসীর “ফি জিলালিল কুরআন” লি সায়্যেদ কুতুব: (৮/৪৩০)}

No comments:

Post a Comment